সাগর বাগচী, শিলিগুড়ি: গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (GTA) এলাকায় শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে মুখবন্ধ খামে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা করল সিবিআই(CBI)। রাজ্য শিক্ষা দপ্তর জিটিএ এলাকায় শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি হাইকোর্টের কাছে তুলে ধরেছে। সূত্রের খবর, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল হাইকোর্টে জানিয়েছেন, জিটিএ এলাকায় ৩১৩ জন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষকের স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে। এক্ষেত্রে হাইকোর্টের তরফে ওই ৩১৩ জনের নিয়োগের বিষয়ে রাজ্যের কাছে হলফনামা চাওয়া হয়েছে। আগামী ৯ মে পরবর্তী শুনানি হবে। সূত্রের খবর, সেদিন সিবিআইয়ের দাখিল করা রিপোর্টটিও দেখা হবে।
জিটিএ-তে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের তরফে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। অভিযোগ, স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষকদের সেখানে অনৈতিকভাবে স্থায়ীকরণ করা হয়েছে। রাজ্যের দায়ের করা অভিযোগে ৭ জনের মধ্যে জিটিএ’র প্রাক্তন প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় তামাং, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের নামও রয়েছে। অভিযুক্তদের পুলিশ কেন গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করছে না, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। শাসক-ঘনিষ্ঠ হওয়ায় কি বাকিদের নামে শুধু অভিযোগ দায়ের করে রাজ্য তাঁদের সিবিআইয়ের থেকে আড়াল করার চেষ্টা করছে, সেই প্রশ্নও এখন ঘুরপাক খাচ্ছে পাহাড়ের বিভিন্ন মহলে।
গোর্খা আনএমপ্লয়েড টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুদান গুরুং বলছেন, ‘নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্ট সিবিআইকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করার বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছিল। সিবিআই নিজেদের কাজ করছে। কিন্তু রাজ্য সরকার শুধু অভিযোগ দায়ের করেই শান্ত হয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশও কিছু করছে না। জিটিএ এলাকার একাধিক নেতার ঘনিষ্ঠরা অনৈতিকভাবে স্থায়ী চাকরি পেয়েছেন।’
জিটিএ’র তরফে অবশ্য শিক্ষক নিয়োগ মামলায় গোটাটাই হাইকোর্ট ও রাজ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি জিটিএ হাইকোর্টে একটি মামলা করার বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে বলে খবর।
জিটিএ’র মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক এসপি শর্মা অবশ্য বলছেন, ‘দীর্ঘদিন পাহাড়ে এসএসসির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া নেই। তাই বলে স্কুলগুলি তো খালি রাখা যায় না। হাইকোর্টে এখন রাজ্যের তরফে হলফনামা জমা করা হবে। রাজ্য সরকার শিক্ষক নিয়োগে ওঠা অনিয়মের অভিযোগটি এড়িয়েও যাচ্ছে না। রাজ্য পুরো বিষয়টি কার্যত হাইকোর্টের ওপর ছেড়ে দিয়েছে।’
সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের হাতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু তথ্য এসেছে। সবমিলিয়ে জিটিএ এলাকায় প্রায় ৪৫০ স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকের স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, যাতে বিভিন্ন স্কুলের কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছেন।