বর্ধমানঃ বন্ধুর বাড়িতে মদের আসরে অস্বাভাবিক মৃত্যু হল এক যুবকের। মৃত যুবক স্থানীয় প্রভাবশালী সিপিএম নেতার ছেলে।সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রামে। মৃত যুবকের নাম সঞ্জীব মণ্ডল(৪০)। সঞ্জীবের বাবা সিদ্ধেশ্বর মণ্ডল আউসগ্রামের সিপিএম নেতা। তিনি একসময়ে আউসগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানও ছিলেন। এই ঘটনায় মদের আসরে থাকা ৫ যুবককে গ্রেপ্তার করেছে আউসগ্রাম থানার পুলিশ। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক রঙ লেগেছে সিপিএম তৃণমূলে।
ডিএসপি ডিএনটি বীরেন্দ্র কুমার পাঠক জানিয়েছেন, ধৃতদের নাম কেষ্ট মেটে, কার্তিক মেটে, বিষ্ণু মণ্ডল, দেবচরণ রায় ও গৌতম দাস বৈরাগ্য। এদের মধ্যে প্রথম তিনজনের বাড়ি আউসগ্রামেই। বাকি দুজন গুসকরা শহরের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ এদিনই ধৃতদের বর্ধমান আদালতে পেশ করেছে। বিষ্ণু ও কেষ্টকে ৭ দিনের পুলিশি হেপাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায় পুলিশ। সেই আবেদন মঞ্জুর করে বাকি ধৃতদের ২০ জুন পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে বর্ধমান আদালত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দেড়েক আগে করোটিয়া গ্রামে বিয়ে করেন সঞ্জীব মণ্ডল। বাড়ির অমতে অসবর্ণে বিয়ে করায় পরিবারের সঙ্গে তার বনিবনা হচ্ছিল না। সেই কারণে সঞ্জীব আউসগ্রামের করোটিয়া গ্রামেই থাকতেন। গাজন উৎসব থাকায় সঞ্জীব দিন তিনেক আগে থেকে অযোধ্যাপাড়ায় আসেন বন্ধু বিষ্ণু মণ্ডলের বাড়িতে। তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, বিষ্ণু মণ্ডলের বাড়িতে রান্নার কাজ করত কার্তিক মেটে। বিষ্ণু, কার্তিক, ও কেষ্ট সোমবার সন্ধ্যার পর সেখানে মদের আসর বসায়। ওই মদের আসরে যোগ দিয়েদিলেন গুসকরার দেবনারায়ণ ও গৌতম। ধৃতদের জেরা পুলিশ জানতে পেরেছে, টাকা নিয়ে মদের আসরে কেষ্টর সঙ্গে বাকিদের বচসা বাঁধে। মদের খরচ বাবদ কেষ্টর ৩০০ টাকা পাওনা ছিল। ওই টাকা কেষ্ট চাইছিল। তারই মধ্যে সঞ্জীব তার ভাগের ২০০ টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পর আরও ৫০০ টাকা দেয় ফের মদ আনার জন্য। তার পরেই মদের আসরে উভয় পক্ষের মধ্যে চরম অশান্তি বাঁধে বলে পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতদের কাছ থেকে জেনেছে।
নিহতের ভাই চিরঞ্জীব মণ্ডল পুলিশের কাছে অভিযোগে দায়ের করে জানিয়েছে, সোমবার দুপুর দেড়টা নাগাদ তাঁদের বাড়ির সামনে দিয়ে কেষ্ট যাচ্ছিল। ওই সময় তাঁর মা কবিতাদেবীকে হুমকি শাসানি দিয়ে কেষ্ট বলে যায়, “আমার টাকা না দিলে সঞ্জুকে মেরে দেব।” এরপর কবিতাদেবী কিছুক্ষণ পর প্রতিবেশী এক মহিলাকে বিষ্ণুর বাড়িতে ছেলের জন্য খোঁজ নিতে পাঠান। ওই মহিলা বিষ্ণুর বাড়িতে উঁকি দিয়ে দেখে আসেন সঞ্জু ও অন্যান্যরা গল্পগুজব করছে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ সঞ্জীবের বাড়িতে খবর পাঠিয়ে বিষ্ণু জানায়, অনেক ডাকাডাকি করেও তারা সঞ্জীবের সাড়া পাচ্ছেন না। এর পর পরিবারের লোকজন সেখানে গিয়ে সঞ্জীবকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পরিকল্পনা মাফিক সঞ্জীবকে খুন করা হয়েছে বলে পরিবারের লোকজন পুলিশকে জানান।
সিপিএম নেতা অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ “সঞ্জীব মণ্ডলের বাবা সিদ্ধেশ্বর মণ্ডল যেহেতু এলাকার সিপিএম নেতা, তাই তৃণমূল কংগ্রেসের দুষ্কৃতীরা সঞ্জীবকে ডেকে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পনা করে খুন করেছে।” যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ইদান্দুল সেখ বলেন, “ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোন যোগ নেই। মদের আসরে হওয়া ঘটনায় রাজনৈতিক রং লাগাতে চাইছে সিপিএম নেতারা”।