শিবশংকর সূত্রধর, কোচবিহার: ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্টের ভোট জমা পড়েছিল পদ্ম শিবিরের(BJP) ভোটব্যাংকে। এবারের ভোটে বামেদের প্রত্যাশা ছিল নিজেদের ভোট কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার হবে। কিন্তু হল একেবারে উলটোটা। পুনরুদ্ধার তো নয়ই, উলটে গতবারের চেয়েও ভোটের পরিমাণ কমে গিয়েছে বামফ্রন্টের।
গতবার লোকসভা নির্বাচনে(Lok Sabha Election 2024) বামফ্রন্টের প্রার্থী গোবিন্দচন্দ্র রায় ৪৬ হাজার ৮১০টি ভোট পেয়েছিলেন। এবারের প্রার্থী নীতীশচন্দ্র রায় পেয়েছেন ৩০ হাজারের কিছুটা বেশি ভোট। এবারে ভোট কেন এত কমল, তা নিয়ে ইতিমধ্যে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করেছে বাম শিবির। উঠে এসেছে সিপিএম-ফরওয়ার্ড ব্লকের মতানৈক্য, বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে জটিলতা সহ বিভিন্ন কারণ।
বাম সমর্থিত ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী নীতীশচন্দ্র রায় বলেছেন, ‘নির্বাচনের ফল দেখে বোঝা যাচ্ছে মানুষ বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। তাই বিজেপিকে হারাতে আমাদের কিছু ভোট তৃণমূলের(TMC) দিকে গিয়েছে।’ বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় আবার এই হারের জন্য মেরুকরণের দোহাই দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরা যে পরিমাণ ভোট পেয়েছিলাম, তার তুলনায় লোকসভায় ভোটের পরিমাণ কমল। তবে আমরা বামপন্থীরা জিতলাম নাকি হারলাম, তাতে কিছু যায় আসে না। আমরা মানুষের জন্য লড়াই করেছি, আর করবও।’
কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্টের প্রার্থী নিয়ে শুরু থেকে চাপা কোন্দল ছিল। বামেদের শরিক দলগুলির মধ্যে কোচবিহারে তুলনামূলকভাবে সিপিএম বেশি শক্তিশালী। কিন্তু বরাবরই এখান থেকে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী দেওয়া হয়। এবার সিপিএমের অন্দরে দাবি ছিল, তাদের দল থেকেই প্রার্থী দেওয়া হোক। কিন্তু শেষপর্যন্ত বামফ্রন্টের তরফে ফরওয়ার্ড ব্লকের নীতীশচন্দ্র রায়কে প্রার্থী করা হয়। এই বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকে দুই দলের চাপা কোন্দল চলছিল। যদিও প্রকাশ্যে কোনও দলের নেতাই সেকথা স্বীকার করেননি। সিপিএমের ভোট পেয়েছেন কি না এই প্রশ্ন করা হলে বাম প্রার্থী উত্তরে বলেছেন, ‘নেতৃত্ব নিশ্চয়ই ভোট দিয়েছে। কিন্তু বাকিটা বলা মুশকিল।’
একসময় কোচবিহার জেলাজুড়ে বামেদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরে শক্তি ক্রমশ কমতে থাকে তাদের। গত লোকসভা নির্বাচনের পর যেন পুরোপুরি কোমর ভেঙে যায়। কিন্তু সেখান থেকে নিজেদের জায়গা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলেও বিফল হতে হয়েছে বামফ্রন্টকে।