তুফানগঞ্জ: প্রতি বছরের মতো এবারও তুফানগঞ্জ-১ এর অন্দরানফুলবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উল্লারঘাট মোড় এলাকায় সাড়ম্বরে পালিত হল ‘দধিমঙ্গল উৎসব’। বাংলা তথা উত্তরবঙ্গের বিলুপ্তপ্রায় বাঙালি কৃষ্টি ও সংস্কৃতির একটি অঙ্গ হল এই উৎসব। বর্তমান আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাংলার প্রাচীন দধিমঙ্গল উৎসব আজ বিলুপ্তির পথে। আগে তুফানগঞ্জ মহকুমার অনেক জায়গায় এই উৎসব পালিত হত। এখন আর সেভাবে দেখা যায় না।
‘দধিমঙ্গল’ উৎসব উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সকাল থেকেই এলাকায় সাজ সাজ রব লক্ষ্য করা যায়। শিশুরা রাধা-কৃষ্ণ সাজার জন্য সকাল থেকেই ব্যস্ত হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে আশপাশের বাড়ির রাধা গোবিন্দ ঠাকুরের বিগ্রহ নিয়ে আসেন পুজো করার জন্য। অনেকের ঘরেই সেদিন উঠুনে হাঁড়ি ওঠে না। কারণ দধিমঙ্গল শেষে নদীতে স্নান সেরে একসঙ্গে সব ভক্তরা মহাপ্রভুর প্রসাদ গ্রহণ করেন। দুপুরে টোটোয় মাইক বেঁধে পেছনে ভক্তদের দলে লক্ষ্য করা যায় কয়েক জোড়া খুদে রাধা-কৃষ্ণ নৃত্য করতে করতে চলছে। বড়রা খোল, করতাল, জয়ঢাক, কাঁসর, হারমোনিয়াম নিয়ে কীর্তন করতে করতে বাড়ি বাড়ি যান। এই দধিমঙ্গল পরিক্রমায় অংশগ্রহণ করেন আট থেকে আশি। কীর্তনে মুখরিত হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস। সবশেষে নামযজ্ঞ কমিটির কুঞ্জের চারদিকে সকলে সাত পাক ঘুরে দই মিশ্রিত হাঁড়ি কুঞ্জের চারিদিকে ভেঙে তাতে ভক্তরা গড়াগড়ি খান। তারপর রায়ডাক নদীতে কীর্তন করতে করতে গিয়ে স্নান করে এসে প্রসাদ গ্রহণ করেন।
অন্দরানফুলবাড়ি উল্লারঘাট নামযজ্ঞ কমিটির কোষাধ্যক্ষ সুজল দাস জানান, পয়লা কার্তিক মাস থেকে শুরু করে পুরো কার্তিক মাস কুঞ্জ তৈরি করে কার্তিক ব্রত করা হয়। তারপর চলে ১৬ প্রহরব্যাপী অষ্টকালীন নাম সংকীর্তন। পরে লীলা কীর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সবশেষে সোমবার মহাপ্রভুর প্রসাদ বিতরণ করা হয়ে থাকে। মঙ্গলবার দধিমঙ্গল উৎসব পালন করা হয়। এলাকাবাসীর মঙ্গল কামনায় এই দধিমঙ্গল উৎসব পালন করা হয় বলে জানা যায়। অন্দরানফুলবাড়ি-১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় সব ভক্তরা অংশগ্রহণ করে থাকেন। অন্দরানফুলবাড়ি নামযজ্ঞ কমিটির সভাপতি বকুল দাস বলেন, বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতেই এই দধিমঙ্গল উৎসব পালন করা হয়।