নাগরাকাটা: উত্তরবঙ্গের চা শিল্পে বোনাস নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না হলেও পূর্ব ঘোষণা মতো শ্রমিকদের ২০ শতাংশ হারে বোনাস দিয়ে দিল ফালাকাটার দলগাঁও চা বাগান কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার সেখানে স্থায়ী প্রায় ১৪০০ শ্রমিককে ২০ শতাংশ হারে বোনাস দেওয়া হয়। শনিবার পাবেন অস্থায়ী ১৩০০-র মতো শ্রমিক। এদিনই বাগানের স্টাফ ও সাব স্টাফদেরও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট মারফত ২০ শতাংশ হারের বোনাসের টাকা সেখানে দিয়ে দেওয়া হয়।বোনাস নিয়ে চূড়ান্ত টানাপোড়েনের আবহে কোন দরকষাকষি ছাড়াই বোনাসের টাকা হাতে পাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশি শ্রমিকরা।
তবে এবারের পুজোয় প্রথম বোনাস প্রদানকারী বাগান দলগাঁও একগুচ্ছ প্রশ্নও তুলে দিয়েছে চা শিল্পের অলিন্দে। অনেকেই বলাবলি শুরু করেছেন যদি ওই বাগানটি পারে তবে এর থেকেও বড় ও সমৃদ্ধশালী আরো বহু বাগান রয়েছে তাঁরা কেন একই হারের বোনাস দিতে গড়িমসি করছেন। যদিও মালিকপক্ষের একাংশের বক্তব্য দলগাঁও পারলেও সবাই পারবে এমনটা নাও হতে পারে। দলগাঁও চা বাগানের ম্যানেজার মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য জানান, শ্রমিক সংগঠনগুলি ২০ শতাংশ বোনাসের দাবিতে চিঠি দিয়েছিল। তা কোম্পানী মেনে নিয়েছে। দলগাঁও চা বাগানের সিদ্ধান্তকে স্বাভাবিক ভাবেই স্বাগত জানিয়েছে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো।
তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি মান্নালাল জৈন বলেন, ‘মজদুরদের পরিশ্রমকে সন্মান ও স্বীকৃতি জানানোর দলগাঁও চা বাগান কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপকে মুক্ত কন্ঠে স্বাগত জানাই। অন্য মালিকরা যেভাবে এবার বোনাস নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু করেছে তা অনভিপ্রেত। গত বছরও যেখানে ২০ শতাংশ বোনাস বেশিরভাগ বাগান দিতে পেরেছে এবার তাঁদের সমস্যা কোথাও সেটা কারোরই বোধগম্য নয়।’ চা শ্রমিকদের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট ফোরামের অন্যতম শীর্ষ নেতা জিয়াউল আলম বলেন, ‘অভিনন্দনযোগ্য প্রয়াস। এবার মালিকপক্ষের সার্বিক ভূমিকা দেখে শ্রমিকরা শঙ্কিত হয়ে আছে। সেখানে দলগাঁও ভিন্নপথে হেঁটে নজির সৃষ্টি করলো।’
বোনাস নিয়ে দলগাঁও এর অবস্থানের পর অন্য মালিকরা যে কিছুটা বেকায়দায় পড়ে গিয়েছেন তা অনেকের কথাতে পরিষ্কার। টেরাই ইন্ডিয়ান প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মহেন্দ্র বানসাল বলেন, ‘দলগাঁও এর উৎপাদন ভাল। তৈরি চায়ের দামও বেশি। কেউ লাভ করলে ২০ শতাংশ হারের বোনাস দিতে চাইলে তাঁকে কিভাবে নিষেধ করা সম্ভব। তবে ৯০ শতাংশ বাগানই কিন্তু এরকম সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে নেই।’ দলগাঁও যে সংগঠনের সদস্য সেই টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার (টাই) উত্তরবঙ্গ শাখার চেয়ারম্যান চিন্ময় ধর বলেন, ‘বোনাস বৈঠক চলছে। এমন পরিস্থিতিতে তাড়াহুড়ো না করে দলগাঁও এর অপেক্ষা করা উচিত ছিল। দ্বিপাক্ষিক আলোচনা থেকে বেরিয়ে এসে এভাবে তাঁরা এমনটা না করলেই ভাল হত। যাই হোক। দলগাঁও ২০ শতাংশ হারের বোনাস দিতে পারলেও সবার পক্ষে তা সম্ভব নয়।’