রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি, ২৯ এপ্রিল : দার্জিলিং জেলা হাসপাতালে কিছু চিকিৎসক মর্জিমাফিক ডিউটি করছেন, আবার কিছু চিকিৎসককে দিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। গত কয়েক মাসে এমন একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে। অভিযোগ, তারপরও নির্বিকার জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর।
দার্জিলিংয়ের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ তুলসী প্রামাণিক অবশ্য বলেছেন, ‘কিছু চিকিৎসককে দিয়ে বাড়তি কাজ করানো হচ্ছে এমন অভিযোগ আমার জানা নেই। আমি হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’ মাইনে বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্য, ‘কেউ ছুটি না নিয়ে অনুপস্থিত থাকলে তো মাইনে আটকানো হতে পারে। পরে ছুটি কেটে আমরা সমস্ত মাইনে নিয়মিত করে দিয়েছি।’
৩৫০ শয্যার দার্জিলিং জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে বহুদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ, এখানে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত কিছু সিনিয়ার চিকিৎসক নিয়মিত ডিউটি করেন না। বরং তাঁরা হাসপাতালের বাইরে ওষুধের দোকানগুলিতেই দিনরাত প্রাইভেট প্র্যাকটিস করছেন। এই পরিস্থিতিতে বাইরে থেকে যাওয়া চিকিৎসকদের হাসপাতালের বাড়তি সমস্ত কাজ সামাল দিতে হচ্ছে। কয়েক মাস আগে হাসপাতালে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। তারপর চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতালে তুলকালাম কাণ্ড হয়েছিল। সেই ঘটনার পর হাসপাতালে ফেস আইডেন্টিফায়েড বায়োমেট্রিক অ্যাটেনড্যান্স ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
অভিযোগ, বায়োমেট্রিকের দোহাই দিয়ে চিকিৎসকদের একাংশকে নিয়মিত চাকরি খেয়ে নেওয়া, সার্ভিস ব্রেক করা, বেতন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। একাধিক চিকিত্সকের বেতন গত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস থেকে বন্ধ রেখে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। অথচ বহু পুরোনো এবং স্থানীয় কিছু চিকিত্সক ডিউটি না করে মুখ দেখিয়ে ফিরে গেলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ জমছে। মানসিক নির্যাতনের জেরে ক্ষুব্ধ দুই চিকিৎসক তিন মাস আগে হাসপাতাল থেকে চলে গিয়েছেন। এখনও তাঁরা আর ফেরেননি। অভিযোগ, সব হাসপাতালেই চিকিৎসকদের ডিউটি চার্ট রয়েছে। কিন্তু দার্জিলিং জেলা হাসপাতালে বাইরে থেকে যাওয়া চিকিৎসকদের দিয়ে দিনরাত কাজ করানো হচ্ছে। খোদ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপারও বিভিন্ন সময় মুখ বন্ধ করে থাকছেন বলে অভিযোগ।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ৩৫০ শয্যার এই হাসপাতালে গড়ে ২০০-২২০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। দিনে গড়ে তিন-চারটি অপারেশন হয়। সেইজন্য একেকটি বিভাগে প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিকিৎসক পোস্টিং দিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ শিলিগুড়িতে হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসকের অভাবে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যানাস্থেটিস্ট সমতলের হাসপাতালগুলিতে নেই, যার ফলে অপারেশন থিয়েটার চালাতে সমস্যা হচ্ছে।