ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ি (Siliguri) শহর থেকে দার্জিলিং (Darjeeling)। দূরত্বটা মেরেকেটে ৭০ কিলোমিটার। অথচ এই পথ পেরোতেই লেগে যাচ্ছে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। বিস্ময়ের হলেও কথাটা সত্যি।
সাধারণত ওই পথ যেতে বড়জোর সময় লাগার কথা আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। তাহলে এত বেশি সময় লাগছে কেন? গাড়িচালক ও পর্যটকদের একাংশ বলছেন, দিনকয়েক ধরে কার্সিয়াং থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ির লাইন লেগেই রয়েছে। তাই অ্যাক্সিলারেটার চাপারও সুযোগ নেই। সোনাদা থেকে গাড়ির দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময়। ফলে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের (Tourists) নাজেহাল অবস্থা। যাঁরা সকালে এনজেপিতে নেমে দার্জিলিংয়ের পথ ধরছেন, তাঁদের রাস্তাতেই একটা দিন কাবার হয়ে যাচ্ছে।
পাকদণ্ডি বেয়ে দার্জিলিংয়ে উঠতে সাড়ে ৫ ঘণ্টা সময় লাগলেও ফেরার সময় লাগছে ঘণ্টাচারেক। তবে দার্জিলিংয়ে যাওয়া ও ফেরার সময় যদি বৃষ্টি থাকে তবে আর কথাই নেই। আরও খানিক সময় নষ্ট হচ্ছে পাহাড়ি পথে। আর এই দোহাই দিয়েই বাড়তি গাড়িভাড়া হাঁকছেন কিছু চালক।
সুকনা পেরোলেই দু’পাশে সবুজ আর সবুজ। মেঘে ঢাকা পাহাড় যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে ক্রমাগত। সেই লোভ সামলানো বড় দায়। তাই তো পর্যটনের ভরা মরশুমে শীতল হাওয়ার খোঁজে দার্জিলিংমুখো হচ্ছেন দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। অধিকাংশ হোটেল, হোমস্টে-তেই এখন তিলধারণের জায়গা নেই। শুধু দার্জিলিং কেন, আশপাশের অফবিট জায়গাতেও এখন একই ছবি।
আশপাশের এলাকা থেকে অনেকেই আবার ডে-আউটের জন্য বেছে নিচ্ছেন শৈলরানিকে। কিন্তু দিনের দিন গিয়ে ঘোরার সুযোগ আর থাকছে কোথায়। পথেই তো কেটে যাচ্ছে অর্ধেক সময়।
বর্ধমানের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ ঘোষ বেসরকারি কোম্পানির কর্মী। কয়েকজন বন্ধু মিলে দার্জিলিং ঘুরতে এসেছেন। তাঁর কথায়, ‘ঘরের কাছে এমন সৌন্দর্য আর কোথায় পাব বলুন! এখানকার ঝিরঝিরে বৃষ্টির সৌন্দর্যও অন্য জায়গার থেকে আলাদা। তবে দার্জিলিংটা যেন পর্যটকদের কাছে ছোট হয়ে গিয়েছে। মনে হয়, শহরটা যদি আর একটু বড় হত…’
পর্যটকের ভিড়ে এই মুহূর্তে গিজগিজ করছে পাহাড়। দার্জিলিংয়ের হটস্পট ম্যালে সুচ ফেলার জায়গা নেই। তবে এরইমধ্যে পর্যটকদের আনন্দে কিছুটা হলেও বাদ সাধছে প্রকৃতি। এদিন যেমন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দার্জিলিংয়ের প্রবল বর্ষণের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। যদিও বৃষ্টি কমতেই পাহাড়ের সেই চেনা ছবি উঠে আসে। কলকাতার বেহালার বাসিন্দা পাপিয়া সেনগুপ্ত তাঁর পরিবার নিয়ে মঙ্গলবার দার্জিলিংয়ে পৌঁছেছেন। তাঁর কথায়, ‘প্রকৃতির খামখেয়ালিপনাই তো দার্জিলিংয়ের মূল বৈশিষ্ট্য। কখনও রোদ, কখনও বৃষ্টি। এই দৃশ্য দেখার জন্যই তো দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ এখানে ছুটে আসেন।’
ভিড় দেখে খুশি পর্যটন ব্যবসায়ীরাও। ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দেবাশিস চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘বেশিরভাগ পর্যটকই বুকিং করে যাচ্ছেন। হোমস্টেগুলিরও বুকিং হয়ে রয়েছে। তবে রাস্তায় এত যানজট হচ্ছে যে, মানুষ সমস্যায় পড়ছেন।’
প্রায় একই সুরে কথা বললেন হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল। তাঁর কথায়, ‘প্রচুর পর্যটক এই মুহূর্তে পাহাড়ে রয়েছেন। তবে পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য বিকল্প ট্রাফিক ব্যবস্থা অবিলম্বে করা প্রয়োজন। না হলে পর্যটকদের দিনের বেশিরভাগ সময় গাড়িতেই কাটাতে হচ্ছে।’