পঙ্কজ মহন্ত, বালুরঘাট: বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে বন্ধ স্বাস্থ্যসাথী নথিভুক্তির প্রক্রিয়া। কোনও রোগীর আত্মীয় স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে রোগী সহায়তা কেন্দ্রে গেলে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের বলা হচ্ছে, ওই কার্ড নথিভুক্ত করার জন্য যন্ত্র কয়েকদিন যাবৎ খারাপ হয়ে রয়েছে। এই মুহূর্তে এই কার্ড এন্ট্রি করা সম্ভব না। ফলে তারা বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যার জেরে কার্যত বিপাকে পড়েছেন রোগী ও পরিজনরা।
হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে যে কোনও ওয়ার্ডে গেলেই বড় বড় হরফে লেখা বিশেষ বিজ্ঞপ্তি নজরে পড়বে। যেখানে লেখা হাসপাতালে রোগীরা ভর্তি হওয়ার সময় যেন স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে আসেন। এমনকি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগী সহায়তা কেন্দ্রে গিয়ে তার নথিভুক্ত করার কথা সেখানে বলা হয়েছে। সেই কার্ড নথিভুক্ত করলে ওষুধপত্র থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা হাসপাতাল বিনামূল্যে করবে। পাশাপাশি, ছুটির সময় রোগী ৪০০ টাকা সাহায্য পাবেন। কিন্তু সেই গুড়ে বালি। কারণ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রোগী সহায়তা কেন্দ্রে গিয়ে মুখ ভার করে ফিরে আসতে হচ্ছে রোগীর প্রিয়জনদের। কারণ তাদের জানানো হচ্ছে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নথিভুক্তের মেশিন নাকি অকেজো। নতুন মেশিন না আসা পর্যন্ত এই কাজ করা সম্ভব না। কিন্তু তাদের ৪০০ টাকা সাহায্যের কথা বলা হলে তারা সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারছেন না। এই নিয়ে হামেশাই বাকবিতণ্ডা তৈরি হচ্ছে হাসপাতাল চত্বরে। কেন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা পাওয়া যাবে না? ইতিমধ্যেই এই নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন অনেক রোগীর পরিজন। যদিও স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে কার্ড পোর্টালে নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে বলে সাফাই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের ভেতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি, রোগী সহায়তা কেন্দ্র ও স্বাস্থ্য দপ্তরের কথার মধ্যে বিরাট অমিল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কোথাও বলা হচ্ছে, রোগী ২০০ টাকা ও হাসপাতাল ২০০ টাকা, এই মোট ৪০০ টাকা পাওয়া যাবে। আবার কোথাও বলা হচ্ছে, এখন টাকা আর পাওয়া যাচ্ছে না।
রোগী সহায়তা কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের এখানে নথিভুক্ত করা হয়। কিন্তু গত পাঁচ-ছয়দিন ধরে সেই যন্ত্র বিকল হয়ে আছে। দু-একদিনের মধ্যেই নতুন যন্ত্র আসার কথা রয়েছে। তা চলে এলেই আবার নথিভুক্ত করনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই মুহূর্তে নাম নথিভুক্ত করলেও সেই অর্থ সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ ২০২২ সালে নথিভুক্তকারীরা এখন টাকা পাচ্ছেন। এই বছরের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা এখনও সেই টাকা পাননি।
এক রোগীর পরিজন প্রশান্ত মহন্ত জানান, প্রসূতি বিভাগে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি লেখা পোস্টার লাগানো হয়েছে। যেখানে রোগী ভর্তি হলেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দ্রুততার সঙ্গে নথিভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এমনকি হাসপাতালে কোনও ওষুধ বা পরীক্ষা সম্ভব না হলে বাইরে থেকে করলেও বিনা পয়সায় করানো যাবে। তার সঙ্গে রোগী ছুটির সময় ৪০০ টাকা অর্থ সাহায্য করা হবে। সেই দেখে রোগী সহায়তা কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে গেলে তারা ঘুরিয়ে দিয়েছেন। কার্ডের জেরক্স কপি জমা দিতে চাইলেও তারা নিচ্ছেন না। আমার মতো অনেকেই এই অর্থ সাহায্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাক্তার সুদীপ দাসকে বিষয়টি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোন করে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেন। তারপর তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নথিভুক্তর প্রক্রিয়া নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যেই এই সমস্যা কাটিয়ে উঠব। যতদূর জানি রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে এই সমস্যা হচ্ছে। তবে ৪০০ টাকা নয়, রোগী ২০০ টাকা ও হাসপাতাল ২০০ টাকা পায়। যদিও তার মুখ থেকে যন্ত্র অকেজো হওয়ার কথা শোনা যায়নি।’