শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ি শহর এবং লাগোয়া মাটিগাড়ায় গত এক মাসে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত প্রায় ১৫ জন। স্বাস্থ্য দপ্তর এই হিসেব দিলেও শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের খবর নেই বলে দাবি করেছে শিলিগুড়ি পুরনিগম। ফলে স্বাস্থ্য দপ্তর এবং পুরনিগমের মধ্যে যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে, তা স্পষ্ট পরস্পরবিরোধী মন্তব্যে। ডেঙ্গির পাশাপাশি শহরে মশার উপদ্রব বাড়লেও কার্যত শীতঘুমে পুরনিগম। ভোটের কাজে মাসখানেকেরও বেশি সময় ধরে ব্যস্ত কাউন্সিলার ও নেতারা এদিকে কোনও নজর দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে। বিশেষ করে সংযোজিত ওয়ার্ডগুলির অবস্থা খুবই খারাপ।
পুরনিগমের স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত বলছেন, ‘নতুন কোনও ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ এখনও নেই। তবে আমাদের তেল স্প্রে করার কাজ চলছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশিকা এলেই ভিসিটি (ভেক্টর কন্ট্রোল টিম)-গুলিকে নামানো হবে।’ দার্জিলিংয়ের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তুলসী প্রামাণিক আবার অন্য কথা বলছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘পুরনিগম এলাকায় সম্প্রতি ৭টি এবং মাটিগাড়া এলাকায় ৮টি কেস পাওয়া গিয়েছে।’
গত বছর এই সময় শিলিগুড়ি পুরনিগম এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ৮০০। পুরনিগম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৩১ মে পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯১০। শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৪, ৫, ৪২ এবং ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে এই সংখ্যা সবথেকে বেশি ছিল। এবছরও এপ্রিল মাস থেকেই শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের হদিস মিলতে শুরু করেছে। এই ওয়ার্ডগুলিকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে গত বছর কাজ করেছিল শিলিগুড়ি পুরনিগম। কিন্তু বর্তমানে শহরে সাতজন ডেঙ্গি আক্রান্ত হলেও পুরনিগমের হেলদোল না থাকায় বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। এখনই যদি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না করা হয় তবে এবছর শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরকে ছাপিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পুরনিগমের বিরোধী দলনেতা অমিত জৈন বলছেন, ‘আমরা আগেও বলেছি। পুর বোর্ডের কর্তারা এখনও নাকি প্রচারে ব্যাস্ত। তাই পুর পরিষেবায় তাঁদের কোনও নজর নেই।’
সন্তোষীনগরের বাসিন্দা কানাইয়া কুমারের কথায়, ‘আমাদের এখানে যে পরিমাণ খাটাল রয়েছে তাতে মশার উপদ্রব কমার নয়। গতবার আমার প্রতিবেশী দাদা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারপর পুরনিগম থেকে এসে স্প্রে করার পাশাপাশি ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়েছিল। এবার তো কিছুই দেখছি না।’
পুরনিগমের পালটা দাবি, শহরে ডেঙ্গির মশানিধনে এখন থেকেই কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, আবাসনগুলিকে চিহ্নিত করে সেখানকার সচিবদের ডাকা হচ্ছে। শহরের নিকাশিনালাগুলিতে মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে। কোথাও জল জমে থাকছে কি না সেটা দেখা হচ্ছে। ফাঁকা জায়গায় আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে। যদিও বাস্তব ছবি বলছে অন্য কথা। শহরের একাধিক ওয়ার্ডে নিকাশি ব্যবস্থার অবস্থা বেহাল। অধিকাংশ ওয়ার্ডেই মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ফলে সন্ধ্যা হলেই মশার দাপটে ঘরে টেকা দায় হয়ে পড়ছে।
শীতলাপাড়ার বাসিন্দা বিট্টু পাসোয়ান বলছেন, ‘আমাদের এখানে তো কাউন্সিলারের দেখাই মেলে না। তাই নিকাশিনালাও ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না। আর মশার উপদ্রব এতটাই যে গরমকালে বিকেলের পর সবসময় ঘরে মশারি টাঙিয়ে রাখতে হয়।’
একই ক্ষোভ ঝরে পড়েছে হায়দারপাড়ার স্বপন পালের গলাতেও। তিনি বলছেন, ‘ভোটের জন্য নালা পরিষ্কার হয় না সেই কবে থেকে। সন্ধ্যার পর ঘরে থাকা যায় না মশার উৎপাতে। কাকে বলব এসব কথা!’ হায়দরপাড়া বাজার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা সন্ধ্যা রায় দাসও দাবি করেছেন, এবছর মশানিধনে পুরনিগমের কোনও ভূমিকা চোখে পড়েনি।
সাধারণ মানুষের এত ক্ষোভ থাকলেও পুরনিগম এখনও পর্যন্ত এসব নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছে না। তবে, আগামী মাসের শুরুতেই আবাসন কমিটিগুলিকে নিয়ে বৈঠকে বসার কথা। সে তো বৈঠক হবে, কিন্তু কাজটা হবে কবে? প্রশ্ন তুলেছেন শহরবাসী।