প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: আর কোনও রাজনৈতিক সৌজন্যতা, সৌহার্দ্যের রাখঢাক নয়। এবারে বিজু জনতা দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অসি শানাল তৃণমূল কংগ্রেস। এদিন, বিজেডি সুপ্রিমো তথা ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের উদ্দেশ্যে বেনজির তোপ দেগেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। তাঁর অভিযোগ, ‘নবীন পট্টনায়েক বিজেপি এবং আরএসএস-এর সুবিধের জন্য কাজ করছেন, তিনি তাঁদের ধামাধারি৷ তা না হলে মণিপুর ইস্যুতে তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া নেই কেন? যখন চার্চ জ্বালানো হচ্ছে, তখন কেন তিনি নিশ্চুপ? এর পরেও উনি নাকি পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন? আসলে নবীনবাবু ভুলে যাচ্ছেন এখন ‘গ্রে এরিয়া’ বা ধূসরতা বলে কিছু হয় না৷ সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার সময় এসেছে৷’
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ বিজেডি সুপ্রিমোর বিরুদ্ধে এমন খড়গহস্ত কেন তৃণমূল কংগ্রেস? প্রসঙ্গত, ২৩ জুন বিহার মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ সুপ্রিমো নীতিশ কুমারের আহ্বানে পটনায় আয়োজিত বিরোধী দলীয় বৈঠকের মঞ্চে নবীন পট্টনায়কের দলের অনুপস্থিতি এবং সর্বোপরি বিজেডির অতিরিক্ত ‘মোদি ঘনিষ্ঠতা’-কে মোটেই ভালো চোখে দেখছে না বিরোধীরা। তৃণমূল কংগ্রেস তার ব্যতিক্রম নয়। অন্যদিকে, বিরোধীদের কাছে ক্রমশ উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে দিল্লি সরকারের অধীনে কর্মরত আইএএস আধিকারিকদের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নিতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সরকারের বিরুদ্ধে মোদি সরকারের আনা অধ্যাদেশ প্রসঙ্গ। এই অধ্যাদেশকে মান্যতা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যসভায় বিল আনলে সংসদে সার্বিক বিরোধী জোটের মাধ্যমে কিভাবে সেই বিলকে আটকানো যায় তার উপায় খোঁজার পন্থা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে বিরোধী মহলে। আর সেখানে অন্যতম ‘প্রতিবন্ধকতা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে ওডিশার বিজু জনতা দল। এই প্রসঙ্গে তৃণমূল চাইছে, প্রয়োজনে বিরোধী স্বার্থে বিল নিয়ে ভোটাভুটি প্রত্যাখ্যান করুক বা ওয়াক আউট করুক বিজেডি; কিন্তু বিলটিতে সমর্থন নৈব নৈব চ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংশ্লিষ্ট ইস্যুটি দিল্লি সরকার এবং আপ কেন্দ্রিক হলেও এই ইস্যুতে বিজেপি বিরোধী সার্বিক বিরোধী ঐক্য গড়া সম্ভব হলে ২০২৪-র লোকসভা ভোটের আগেই সরকারপক্ষকে সংসদীয় আঙিনায় হারানো সম্ভব৷ এই প্রসঙ্গেই রাজ্যসভার সংখ্যাতত্ত্বকে গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করছে বিরোধী শিবির৷ এখন রাজ্যসভার সদস্য সংখ্যা ২৩৮৷ এই বিল প্রতিহত করতে গেলে প্রয়োজন ১২০ জন সদস্যের সমর্থন৷ বিরোধীদের হাতে আছে ১০৫ জন সদস্যের সমর্থন৷ নবীন পট্টনায়েকের বিজেডি, জগনমোহন রেড্ডির ওয়াই এস আর (সিপি)-র মধ্যে যে কোনও একটি দলের সমর্থন পেলেই সরকারকে রোখা সম্ভব হতে পারে বলে দাবি বিরোধী শিবিরের। এই অঙ্ক মাথায় রেখেই সোমবার বিজেডি সুপ্রিমো নবীন পট্টনায়েকের উদ্দেশে তোপ দেগেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন৷ কারণ তিনি জানেন, ভবিষ্যতে জগন রেড্ডির মন গললেও, বিজেপি বিরোধী কোনও সিদ্ধান্ত বা পরিকল্পনায় মত দেবেন না নবীন পট্টনায়ক। বিরোধী বৈঠকও প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি, এই বিলেও তাঁর সমর্থন পাওয়ার আশা, দুরাশা।
স্বাভাবিকভাবেই বিজেডির উপর ক্ষুব্ধ তৃণমূল সহ অন্যান্য বিরোধী শিবির। আজ তারই প্রতিফলন ধরা পড়ল তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্য জাতীয় মুখপাত্র ও রাজ্যসভা দলনেতার কণ্ঠে। এই প্রসঙ্গে চুপ করে থাকেনি বিজেডিও। প্রবীণ বিজেডি সাংসদ ও লোকসভা চিফ হুইপ ভর্তুহরি মাহতাব বলেন, ‘কারুর কাছ থেকে আমরা কোনও রকম নীতিকথা শিখব না। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার৷ তৃণমূলের প্রকৃত ভূমিকা কী, তা সবাই জানে। দল তাঁর অবস্থান মেনেই কাজ করবে।’
প্রসঙ্গত, বিজেডি-ওয়াইএসআর ব্যতিত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই অধ্যাদেশ ইস্যুতে সব বিরোধী দলের সমর্থন চেয়েছেন৷ তৃণমূল, আরজেডি, শিবসেনা, এনসিপি, সিপিএম সহ বিভিন্ন দল কেজরিওয়ালের প্রতি সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিলেও আপ-কে সমর্থন করা হবে কি না সেই বিষয়ে জাতীয় কংগ্রেস এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি৷ এমনকি অরবিন্দ কেজরিওয়াল সাক্ষাতের সময় চাওয়ার পরেও তাঁর সঙ্গে এখনও দেখা করেননি রাহুল গান্ধি৷ এই পরিস্থিতিতে আপ-এর ক্ষেত্রে কংগ্রেস কী ভাবছে তা নিয়েও আলোচনা করা হতে পারে পটনার বৈঠকে।