হেমতাবাদ: প্রতি বছর দেবী বিসর্জনের পর অন্য কোনও বিষাদের সুর ভেসে বেড়ায়। সেই সময় অন্য দুর্গাপুজোয় মেতে ওঠেন রায়গঞ্জ ব্লকের কমলাবাড়ি ২ নম্বর খাদিমপুরের বাসিন্দারা। দশমীর সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে পুজো। ২০০০ পরিবারের প্রায় ৮৫০০ জন বাসিন্দার সম্মিলিত উদ্যোগে দশমীর রাত থেকে শুরু হয় ওই পুজো। চলবে শুক্রবার পর্যন্ত।
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা রমনী বর্মন জানান, গ্রামের মঙ্গলকামনায় এলাকার বাসিন্দারা বংশ পরম্পরায় বলাই চণ্ডী পুজো করেন। প্রাচীন রীতিনীতি, আচার, নিষ্ঠা মেনে প্রতি বছর প্রচুর ভক্ত এই পুজোয় সামিল হন। পুজো কমিটির সম্পাদক বিশ্বনাথ বর্মন জানান, অন্যদের মতো দুর্গাপুজোর আনন্দে মাতেন না। সারা বছর ধরে এই বলাই চণ্ডী পুজোর দিকেই তাকিয়ে থাকেন। দশমীর রাত থেকে টানা পাঁচদিন গ্রামের বাসিন্দারা নতুন পোশাক পরে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন। অবশ্য দেবী বলাই চণ্ডী তথা দুর্গা প্রতিমার ১০ হাতের জায়গায় ৪ হাত রয়েছে। অসুর, মহিষের কোনও অস্তিত্ব নেই। সিংহের ওপর বসে বলাই চণ্ডী, তার পাশে লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতীর মূর্তি আছে।
মন্দিরের পুরোহিত জানান, ৫০০ বছর আগে দশমীতে এই গ্রামে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রচুর ফসল, ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়। বহু মানুষ মারা যান। সেথেকেই সমাজের মঙ্গল কামনায় বাসিন্দারা বলাই চণ্ডী পুজো শুরু করেন। রীতি অনুযায়ী যাতে বাসিন্দারা পূজার্চনা করতে পারেন, সেই জন্য প্রতিমা বিসর্জন না দিয়ে বট-পাকুড় গাছের প্রাচীন মন্দিরে রেখে দেওয়া হয়। প্রতি বছর বিশ্বকর্মা পুজোর পরেরদিন পুরোনো দেবীর বিসর্জন হয়। বিসর্জনের পরে মৃৎশিল্পীদের প্রতিমার বরাত দেওয়া হয়। বংশ পরম্পরায় শিল্পীরা এই প্রতিমা গড়েন। পুরোহিতরাও বংশ পরম্পরায় পুজো করে আসছেন। পুজোর ৫ দিন মঙ্গলযজ্ঞ হয়। এরপর দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্তদের উৎসর্গ করা পাঠা, পায়রা মিলিয়ে ৫০০টি বলি হয়। পুজো উপলক্ষ্যে এক সপ্তাহ ধরে মেলা চলে।
পুজো কমিটির সভাপতি ফুলকান্ত বর্মন বলেন, বংশ পরম্পরায় পুজো করে আসা পুরোহিত তপন চক্রবর্তীই এবার পুজো করছেন। পুজো কমিটির কার্যকরী সম্পাদক সুরেন্দ্রনাথ বর্মনের কথায়, পুজো মোট পাঁচদিন হবে। শুক্রবার হবে দশমী। এদিন মন্দির চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন পুজো উদ্যোক্তারা। তা চলবে পাঁচদিন ধরে। তিনি আরও বলেন, পুজোর কোন চাঁদা তোলা হয় না। গ্রামবাসীরাই পুজোর দায়িত্ব নেন।