ধূপগুড়িঃ রবিবার ধূপগুড়িতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনসভা হয়েছে। ব্যক্তিগত জমিতে ওই জনসভা হয়েছিল। কিন্তু জমির ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে ধোঁয়াশায় জমি মালিকরা। কত টাকা ক্ষতিপূরণ কবে মিলবে তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও আশ্বাস না মেলায় ক্ষোভ দানা বাঁধছে জমি মালিকদের মধ্যে। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো এই ক্ষোভে ঘৃতাহুতি দিয়েছে অস্থায়ী হেলিপ্যাডের জমি মালিকদের টাকা পেয়ে যাওয়ার খবর। মোদির সভার উলটোদিকে মোট সাড়ে উনিশ বিঘা জমিতে তৈরি হওয়া অস্থায়ী হেলিপ্যাডে নেমেছিল ভারতীয় বায়ুসেনার তিন তিনটি হেলিকপ্টার। সেখানে মোট ১৩ জন জমির মালিক ইতিমধ্যেই বিঘা প্রতি ৬০ হাজার টাকা নগদে গুণে নিয়েছেন। হেলিপ্যাড তৈরির জন্য জমি দিয়েছিলেন ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘সভার পরে পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়ে ধন্দ থাকায় আগেভাগেই বিঘা প্রতি ষাট হাজার টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার শর্তেই আমরা জমি দিয়েছিলাম।’
হেলিপ্যাড তৈরির ক্ষেত্রে আগেভাগে টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হলেও সভাস্থলের জন্যে ঘিরে ফেলা প্রায় পঞ্চাশ-ষাট বিঘা জমির মালিকদের সঙ্গে সভার আগে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বিজেপি নেতাদের। জমি মালিকরা জানান, আলুর পর যারা পাট চাষ শুরু করেছিলেন তাঁদের বিষয়ে আলাদা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন পদ্ম নেতারা। তবে এখনও নির্দিষ্ট কোনও অঙ্কের কথা না জানানোয় ধোঁয়াশা এবং ক্ষোভ বাড়ছে তাদের। মোদির সভাস্থলের জন্য দুই বিঘা জমি দিয়েছিলেন কৃষক আনন্দ মোদক। তিনি বলেন, ‘কেউই তো কিছু খোলসা করে বলেননি আজও। প্রধানমন্ত্রীর সভা হয়েছে ভালো কথা তবে জমির আল সীমা সবই তো মুছে গিয়েছে। তাছাড়া লাখো মানুষের পায়ের চাপ এবং রোলারের চাপে জমি একেবারে পাথর হয়ে গিয়েছে।’
সভাস্থলের পাশেই বাড়ি রিঙ্কু রায়ের। মোদির সভার জন্যে তার সাড়ে তিন বিঘা জমির পাট চাষ নিশ্চিহ্ন করতে হয়েছে। পাটের দামের পাশাপাশি জমির ক্ষয়ক্ষতির জন্যেও আলাদা করে দাবি রয়েছে তাঁর। রিঙ্কুর বক্তব্য, ‘চাষ করলে বিঘায় গড়ে চার পাঁচ মন পাট পাই আমরা। তার যেমন বাজারদর আছে তেমনি তিন ফসলি এই জমির বর্তমান যা অবস্থা তাতে আগামী একবছর চাষ সম্ভব কিনা বুঝতে পারছি না। ফলে সেটা সহ ক্ষতিপূরণ পেলে ন্যায্য হবে।’
সভাস্থলের জন্যে ঘিরে ফেলা অংশের বাইরেও ভিড়ের চাপে আরও বেশ কিছু জমির ক্ষতি হয়েছে বলেই দাবি বহু জমি মালিকদের। তারাও চাইছেন ক্ষয়ক্ষতি অনুসারে ক্ষতিপূরণ দিক বিজেপি। এদিকে, পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না দিলে কৃষক এবং জমি মালিকদের পাশে যে তৃণমূল দাঁড়াবে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন জোড়াফুল নেতারা। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক রাজেশকুমার সিং বলেন, ‘কাজ ফুরোলেই পাততাড়ি গুটিয়ে নেওয়া বিজেপির স্বভাব। কৃষকরা কোনওভাবে বঞ্চিত হলে আমরা তাদের হয়েই সওয়াল করব।’
বিজেপি নেতারা দ্রুত ক্ষতিপূরণ নিয়ে আশার কথা শোনালেও কী হারে কিংবা কবে তা বাস্তবায়িত হবে তা স্পষ্ট করেননি। বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, ‘কাজ করিয়ে টাকা না দেওয়া তৃণমূলের সংস্কৃতি, আমাদের নয়। হেলিপ্যাডের টাকা যেমন বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, তেমনি সভাস্থলের জমি মালিকদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা এবং হিসেব কষে দ্রুত ক্ষতিপূরণ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’