দিনহাটা, ৩০ মার্চ : সালটা ১৯৭৩, দিনহাটা পুরসভার পথচলা শুরু হয়েছিল। এরপর থেকে পাঁচ বছর পরপর পুরভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এসেছে দিনহাটা পুরসভায়। তবে গত ২০২২-এর পুরভোটে ঘটে ঠিক তার উলটপুরাণ। একপ্রকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল কংগ্রেস দিনহাটা পুরসভা দখল করে। এর কারণ হিসেবে বিরোধীরা শাসকদলের সন্ত্রাসের ভয়েই তাঁদের প্রার্থীরা নাম তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেন।
পাশাপাশি প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও শহরের আনাচে-কানাচে কান পাতলে শোনা যায়, ভোট দিতে না পারার আক্ষেপ সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে। আর এই ক্ষোভকেই এবারের লোকসভা ভোটে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি, বামফ্রন্ট সহ বিরোধী দলগুলি।
গত বুধবার দিনহাটা পাঁচমাথা মোড়ের সভা থেকেই বিজেপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাফুজা খাতুন শাসকদলকে নিশানা করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘শাসকদল যেন না ভাবে এটা ২০২২-এর পুরভোট। এখানে রাজ্য পুলিশ নয়, কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে, তাই এখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের ব্যাপার নেই সেটা যেন মনে রাখে তারা।’
গত লোকসভা ভোটে দিনহাটা শহরের ১৬টি ওয়ার্ডে তৃণমূল ৬৫০০ ভোটে পিছিয়ে ছিল। তাই বিরোধীদের দাবি, শাসকদল সাধারণ মানুষের ক্ষোভের কথা আঁচ করেই আগেভাগে শহরে প্রচারে নেমেছে। তাই প্রতিটি ওয়ার্ডে ইতিমধ্যে যুব, মহিলাদের একাধিক পর্যায়ে বৈঠক শুরু হয়েছে। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ নিজে প্রতিটি ওয়ার্ডে গিয়ে প্রার্থীর হয়ে ভোট প্রচার করছেন।
আর এই প্রচারকেই কটাক্ষ করছেন সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য শুভ্রালোক দাস। তাঁর কথায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ায় ওয়ার্ডের অধিকাংশ বাসিন্দা কাউন্সিলারকে চেনেন না। আর কাউন্সিলারদের দায়বদ্ধতা না থাকায় পুরসভার একাধিক সমস্যা সমাধানে নতুন পুরবোর্ড অপারগ। তাই যারা গণতন্ত্রের কথা বলে সবসময় তারা যে আসলে গণতন্ত্র বিরোধী সেকথা আমরা শহরবাসীর কাছে প্রচারে তুলে ধরছি, তাঁরাও ভোট না দিতে পারার ক্ষোভের কথা আমাদের জানাচ্ছেন।’
একই সুরে বিজেপির জেলা কমিটির সম্পাদক অজয় রায়ের বক্তব্য, ‘তৃণমূল বারবার নকল করে পরীক্ষায় পাশ করেছে, তবে লোকসভা ভোটের পরীক্ষক কঠোর। তাই এবার আর নকল করে পাশ করতে পারবে না তারা, মানুষ নিজের ভোট নিজেই দিতে পারবে।’
যদিও তৃণমূলের শহর ব্লক সভাপতি বিশু ধর এইসব অভিযোগে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর মন্তব্য, ‘আমরা ভোট ছাড়াও মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। বিজেপির মতো পরিযায়ী পাখি নই যে ভোট হলেই উড়ে চলে যাই, আবার ভোট এলে দেখা দিই।’
পুরভোট প্রসঙ্গে তাঁর সাফাই, ‘এছাড়া আমরা পুরভোটে লড়াই করতেই নেমেছিলাম, বিরোধীরা প্রার্থী দিতে না পারলে সে বিষয়ে আমাদের কিছু করণীয় থাকে না, তাই বিরোধীদের অপপ্রচারের যোগ্য জবাব সাধারণ মানুষই এবারের ভোটে দিয়ে দেবে।’