সন্তু চৌধুরী, মালবাজার: ডুয়ার্সের পুরোনো বাসিন্দাদের মুখে প্রায়ই একটি কথা শোনা যায়। এখানকার আকাশ নিমেষে রং বদলায়। উত্তরবঙ্গের এই প্রান্তর বহুবার হড়পা, ঝড় সম্প্রতি টাইফুনের সম্মুখীন হয়েছে। তারপরেও ডুয়ার্সের আবহাওয়া সম্পর্কিত গবেষণা সেই অর্থে গতি পায়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বারবার বিপর্যস্ত হয়েছে ডুয়ার্স (Dooars)। এই এলাকায় সেভাবে আবহাওয়া নিরীক্ষণ কেন্দ্র না থাকায় এখানকার জলবায়ু সম্পর্কিত গবেষণা ও সেইসঙ্গে সুষ্ঠু পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই সিকিমের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর ডুয়ার্সে চারটি ওয়েদার অবজার্ভেটরি পয়েন্ট (ডব্লিউওপি) (WOP) বা আবহাওয়া নিরীক্ষণ কেন্দ্র চালু করল। মাথাভাঙ্গা কলেজ, ধূপগুড়ি কলেজ, বানারহাট উচ্চবিদ্যালয় ও মালবাজারের আদর্শ বিদ্যাভবনে থাকা এই চারটি কেন্দ্র ইতিমধ্যেই আবহাওয়ার বিভিন্ন তথ্য সরাসরি দপ্তরকে পাঠাতে শুরু করেছে।
এই কেন্দ্রগুলি থেকে দিনের তাপমাত্রা, দৈনিক বৃষ্টির পরিমাণ, বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ, হাওয়ার দিক ও গতি জানা যাবে। সিকিম আবহাওয়া দপ্তরের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘ডুয়ার্সের ক্ষেত্রে আমরা এতদিন শুধুই পূর্বাভাসই দিতে পারতাম। কিন্তু সঠিক তাপমাত্রা, বৃষ্টির পরিমাণ জানা যেত না। এই কেন্দ্রগুলি সেই ঘাটতি মেটাবে বলে আশা করি।’
আবহাওয়া আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ডুয়ার্সের ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া গেলেও সেই ঝড় কত কিমি বেগে, কোন কোন এলাকা দিয়ে বয়ে যাবে তা জানার কোনও উপায় ছিল না এতদিন। এবার সেটি সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। সেইসঙ্গে উত্তরবঙ্গের আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি নিরীক্ষণের মাধ্যমে জলবায়ুর পরিবর্তন ও তার প্রভাব সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা আরও নিবিড় হবে বলেই মত আধিকারিকদের।
বর্তমানে এই কেন্দ্রগুলি আবহাওয়া দপ্তরের ওয়েবসাইট ও অ্যাপে সরাসরি তথ্য পাঠাতে শুরু করেছে। এখানে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের পাশাপাশি হাতেকলমে তথ্য নেওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে। সোলার চার্জিং প্যানেল থাকায় কোনও বিদ্যুতের দরকার হবে না এই কেন্দ্রগুলির।
যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে এই কেন্দ্র তৈরি হয়েছে তাই হাতেকলমে রিডিং নেওয়ার পদ্ধতি স্কুল ও কলেজগুলিকে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটায় রিডিং নেওয়ার ঘোষণা হয়েছে।
মালবাজার আদর্শ বিদ্যাভবনের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক উৎপল পাল বলেন, ‘ভূগোল বিভাগের ছাত্রছাত্রী তথা শিক্ষকরাও এতে উপকৃত হবেন। প্র্যাকটিকাল বিষয়গুলো তারা আরও উৎসাহ নিয়ে শিখতে পারবে।’ কিছুদিনের মধ্যেই স্কুলের তরফেও ম্যানুয়ালি এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করা শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।