ত্রিবেণি (কালিম্পং): করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ত্রিবেণিতে নতুন হাসপাতাল তৈরি হয়েছিল। ভাইরাসের সংক্রমণ কমে যাওয়ায় সেখানে সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু গত বছরের অক্টোবর মাসে তিস্তা নদীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ওই হাসপাতাল এখন পলির তলায় পড়ে। ত্রিবেণিতে যাতায়াতের রাস্তা সহ ওই হাসপাতালের রাস্তাও তলিয়ে গিয়েছে নদীতে। স্থানীয়দের বাধায় এখনও ত্রিবেণির সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ তৈরি করতে পারেনি প্রশাসন। গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) তরফে জানানো হচ্ছে, পুরো রাস্তা নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। কিছু সমস্যার জন্য রাস্তা তৈরির কাজ আটকে।
ত্রিবেণিতে দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের (ডিজিএইচসি) আমলে একটি পর্যটন আবাস তৈরি হয়েছিল। অথচ সেটি চালু হয়নি। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর পাহাড়ের রোগীদের চিকিৎসা করতে ত্রিবেণির এই পর্যটন আবাসে হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। সেইমতো এখানে ৫০টি শয্যা, এক্স-রে মেশিন থেকে শুরু করে অন্যান্য চিকিৎসা পরিকাঠামো তৈরি করা হয়। প্রায় দেড় বছর এখানে রোগীদের রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় হাসপাতালটি পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘদিন পড়ে ছিল। পরবর্তীতে পর্যটন আবাসে স্থানীয় মানুষের সুবিধার্থে সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল অথবা ক্যানসার হাসপাতাল তৈরির কথা চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল। সেইমতো স্বাস্থ্য ভবনে প্রস্তাবও যায়।
এরই মাঝে গত বছরের অক্টোবর মাসে সিকিমের লোনাক হ্রদ বিপর্যয়ের জেরে তিস্তায় ভয়াবহ জলস্ফীতি হয়। এই হড়পার কারণে সিকিমে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়, ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কালিম্পং জেলাতেও। তিস্তাবাজারে প্রচুর বাড়িঘর, যানবাহন নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। তিস্তাবাজার থেকে পেশক হয়ে দার্জিলিং যাওয়ার রাস্তা জলের তোড়ে পুরোপুরি ভেসে যায়। যার ফলে তিস্তাবাজার, ত্রিবেণি হয়ে দার্জিলিং যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ত্রিবেণির বাসিন্দাদের বাড়িঘর নষ্ট হওয়ায় তাঁরা এখনও ভাড়াবাড়িতে দিন কাটাচ্ছেন।
বিপর্যয় কেটে যাওয়ার পরে তিস্তাবাজারের রাস্তা পুনরায় তৈরি হয়েছে। দার্জিলিং যাওয়ার পেশক রোডও চালু হয়েছে। কিন্তু ত্রিবেণির রাস্তা আজও চালু হয়নি। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, তিস্তাবাজার পেরিয়ে যেখান থেকে পেশক এবং ত্রিবেণির রাস্তা ভাগ হয়েছে সেখান থেকেই বিপত্তি। ত্রিবেণি যাব শুনতেই স্থানীয়রা বললেন, ‘রাস্তাই নেই। কীভাবে যাবেন? নীচে শুধু বালি জমে। গাড়ির চাকা স্কিড করলে সোজা নদীতে চলে যাবেন।’
ঝুঁকি নিয়ে ত্রিবেণির রাস্তায় এগোতেই সামনে তিস্তা নদী। তার পাশ দিয়ে শুধু পলির স্তর পড়ে। এই পলির ওপরে আরও মাটি ফেলে ত্রিবেণির রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করেছিল পূর্ত দপ্তর। কিন্তু স্থানীয়রাই কাজে বাধা দিয়েছেন বলে জানা গেল। যার ফলে ত্রিবেণির রাস্তার যে অংশ নদীতে ভেসে গিয়েছিল, তার প্রায় ২০০ মিটার এখনও তৈরি হয়নি। যার জেরে সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ। চারদিকে পলির স্তর দেখে আতঙ্কিত ত্রিবেণির মানুষ। স্থানীয়দের ভয়, ফের ভারী বৃষ্টি হলে বানভাসি হতে পারেন তাঁরা।
জিটিএ’র জনসংযোগ আধিকারিক এসপি শর্মার বক্তব্য, ‘রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হওয়ার পরে স্থানীয় কিছু লোক কাজের বরাত চেয়ে ওই কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। সেসময় থেকেই কাজ বন্ধ।’