বানারহাট: একসময় চলত রমরমিয়ে। তবে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় আজ পরিত্যক্ত ডুয়ার্সের বেশ কয়েকটি বিমানবন্দর (Airport)। প্রশাসনের নজরের অভাবে ইতিহাসের পাতা সেগুলি প্রায় একপ্রকার মুছে গিয়েছে।
৩১ সি জাতীয় সড়ক তখনও তৈরি হয়নি। ফরাক্কাতেও তৈরি হয়নি সেতু। ফলে এই বিমান পরিষেবাই ছিল জলপাইগুড়ি ও ডুয়ার্সের বাসিন্দাদের কলকাতার সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের ভরসা। যাত্রী পরিবহণ ছাড়াও চা বাগানের ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিমানে করেই আনা হত। কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক খবরের কাগজ শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়িতে ট্রেনে করে পৌঁছতে বিকেল, কখনও বা পরের দিন সকাল হয়ে যেত। তবে ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা এই বিমান পরিষেবার (Service) দৌলতে সকাল ১০ টার মধ্যেই খবরের কাগজ হাতে পেয়ে যেতেন। এমনই একটি এয়ারফিল্ড ছিল বানারহাট সংলগ্ন মোরাঘাটে। যে জমির এক প্রান্তে এখন গড়ে উঠেছে বানারহাট কার্তিক ওরাওঁ হিন্দি কলেজ।
গুজরাতের ‘নওয়ানগর’ স্টেটের মহারাজা জামসাহেব দিগ্বিজয় সিং, রণজিৎ সিং জাদেজা ‘জাম এয়ার’ এয়ারলাইনের সূচনা করেন। পরবর্তীতে জামনগর থেকে কলকাতাতে সংস্থাটি তাদের হেড অফিস স্থানান্তরিত করে। মোরাঘাট চা বাগানের থেকে জমি লিজ নিয়ে ‘জাম এয়ার’ কোম্পানি ‘নিউ তেলিপাড়া এয়ারপোর্ট’ নামের একটি এয়ারস্ট্রিপ গড়ে তুলেছিল। এখানে ছোট বিমান ওঠানামার উপযোগী রানওয়ের (Runway) পাশাপাশি ছিল অফিস ও দোতলা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের টাওয়ার। সেই সঙ্গে ছিল পাইলট ও টেকনিশিয়ানদের জন্য রেস্ট রুম। ডগলাস ডিসি-থ্রি এবং ডিসি-ফোর মডেলের ছোট বিমান এই বিমানঘাঁটি থেকে নিয়মিত যাত্রী সহ চিঠিপত্র, চা পাতা ও অন্যান্য সামগ্রী পরিবহণ করত। জানা যায়, অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলায় এমনই আরও ৯ টি বিমানবন্দর ছিল। পাঙ্গা, আমবাড়ি, ওদলাবাড়ির কাছে সরুগাঁও, নাগরাকাটার গ্রাসমোড় চা বাগান, বানারহাটের তেলিপাড়া, ফালাকাটার কাদম্বরী চা বাগান, হাসিমারা সংলগ্ন চুয়াপাড়া চা বাগান এবং আলিপুরদুয়ারের কোহিনুর ও কুমারগ্রাম সংলগ্ন নিউল্যান্ড চা বাগানে গড়ে উঠেছিল এয়ারস্ট্রিপ (Airstrip)। তবে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় ১৯৭৭ সালে বন্ধ হয়ে যায় এই বিমান পরিষেবা।