উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ ম্যাচের ৭১ মিনিটের মাথায় দুরন্ত গোল পেত্রাতোসের। সেই গোলেই ডুরান্ডের ফাইনালে যুবভারতীতে নিভে গেল লাল হলুদ মশাল। ১০ জনে খেলে গ্রুপ লিগে হারার বদলা নিয়ে নিল মোহনবাগান। ডুরান্ডের ফাইনালে ২০০৪ সালের পরে ফের ডুরান্ড কাপের ফাইনালে মুখোমুখি কলকাতার দুই প্রধান ইস্টবেঙ্গল -মোহনবাগান। সেবার মোহনবাগানকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল লাল হলুদ দল। এবার ১ গোলে হারিয়ে সেই বদল নিল মোহনবাগান। ডুরান্ডের গ্রুপ লিগের ডার্বিতে হারার আগে পর্যন্ত টানা আটটি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছিল মোহনবাগান। তবে গ্রুপ লিগের ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের কাছে হেরে যাওয়ায় বদলার ম্যাচ ছিল আজকের যুবভারতীর ফাইনাল। ১ গোলে হারিয়ে সেই বদলা নিয়ে নিল সবুজ মেরুন।
২০০৪ সালের পর রবিবার যুবভারতীতে ডুরান্ডের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল কলকাতার দুই প্রধান ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান। ১৯ বছর আগে দিল্লির আম্বেদকর স্টেডিয়ামে মোহনবাগানকে ২-১ গোলে হারিয়ে ডুরান্ড কাপ জয় করেছিল লাল হলুদ। এতদিন পর যুবভারতীতে সেই হারের বদলা নিল মোহনবাগান। এদিন ম্যাচ দেখতে ক্রীড়াঙ্গণে ঢল নামে দু’দলের সমর্থকের। এদিনের ম্যাচের নায়ক দিমিত্রি পেত্রাতোস। ডুরান্ডে প্রথমা ডার্বিতে হারার পর এদিন প্রথম থেকেই সতর্ক ছিল মোহনবাগান। মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দো আক্রমণভাগে রেখেছিলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস এবং আর্মান্দো সাদিকু। এ দিনও প্রথম একাদশে রাখেননি বিশ্বকাপার জেসন কামিংসকে। অন্য দিকে, ইস্টবেঙ্গলের কোচও প্রথম একাদশে রাখেননি ক্লেটন সিলভাকে। ডান দিকে উইং সচল রাখার কারণে নিশু কুমারের জায়গায় খেলান মহম্মদ রাকিপকে।
এদিন শুরু থেকেই যুবভারতীর সবুজ গালিচায় চলছিল আক্রমণ এবং প্রতি আক্রমণের খেলা। মাঠে দাপট দেখিয়েছে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানও ছেড়ে কথা বলছিল না। ম্যাচের প্রথম ভাল সুযোগ আসে মোহনবাগানের কাছেই। ইস্টবেঙ্গলের বক্সের ভিতরে গোলের সুযোগ পেয়েও জালে বল জড়াতে ব্যর্থ হন মোহনবাগানের আশিস রাই। মোহনবাগানের ফুটবলারদের মধ্যে দেখা যাচ্ছিল ফিনিশিংয়ে ব্যর্থতা। এদিন প্রথমার্ধের একেবারে শেষের দিকে গোলের সহজ সুযোগ পান ইস্টবেঙ্গলের নন্দকুমার। নন্দকুমারের শট যদি সবুজ মেরুন জালে জড়িয়ে যেত, তা হলে অতি দৃষ্টিনন্দন গোল হতো। কিন্তু হল না, বল বারের ওপর দিয়ে চলে গিয়েছে
এর পরেই ম্যাচে তুমুল উত্তেজনা। ইস্টবেঙ্গলের কর্নারের পর বল গিয়েছিল বোরহার পায়ে। কিন্তু গোল আটকানোর চেষ্টায় বোরহা টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেন আলবেনিয়ার ফুটবলারকে। এর পরেই শুরু হয় ঝামেলা। বোরহাকে এসে ঠেলা মারেন বুমোস। ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায় পেত্রাতোসের। বোরহা এবং বুমোসকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি রাহুল গুপ্তা।
দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমন প্রতি আক্রমনে যায় দুই দলই। একই ভঙ্গিতে খেলা শুরু করে। ৫৭ মিনিটের মাথায় বুমোস একটি সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। ৬২ মিনিটের মাথায় বড় ধাক্কা খেল মোহনবাগান। পরপর দুটো হলুদ কার্ড দেখার কারণে লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন অনিরুদ্ধ থাপা। সিভেরিও বল নিয়ে এগোনোর সময়ে, অনিরুদ্ধ বুট দিয়ে সরাসরি স্প্যানিয়ার্ডের মাথায় আঘাত করেন। এরপর থেকে দশ জনেই লড়াই চালিয়ে যায় মোহনবাগান। আক্রমনের গতি বাড়াতে মোহনবাগান কোচ ফেরান্দো বুমোসের বদলে নামান কামিংসকে। বাঁ দিকে আশিকের বদলে নামেন লিস্টন কোলাসো। সেই সিদ্ধান্তের সুফল মেলে সঙ্গে সঙ্গে।
৭১ মিনিটেই এগিয়ে যায় মোহনবাগান। ডান দিকে বল নিয়ে এগোতে থাকেন পেত্রাতোস। তাঁকে আটকানোর কোনও চেষ্টাই করেননি ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারেরা। পেত্রাতোস সামান্য কাট করে বাঁ পায়ে নিখুঁত শটে পর্যুদস্ত হন ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার প্রভসুখন গিল। ইস্টবেঙ্গলের জালে জড়িয়ে যায় বল। সেই গোল আর শোধ করতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরই মোহনবাগান আক্রমনাত্বক ফুটবলের বদলে নিজেদের কিছুটা গুটিয়ে নেয়। রক্ষণাত্মক খেলতে শুরু করে তারা। এই সময় একের পর এক সুযোগ তৈরি করছিল ইস্টবেঙ্গল। কিছু মোহনবাগানের রক্ষণ ভেদ করতে পারেনি তারা। শেষ ৩০ মিনিট দশ জনে খেলেও গোল ধরে রাখে সবুজ-মেরুন।