শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: সোনালি হয়ে আসা ধানের শিষের আগায় জমে থাকা শিশিরে সূর্যের আলো পরে চিকচিক করছিল। ধানি জমির মাঝে আল পথ ধরে ঠাকুরদার সঙ্গে হাঁটছিল ছোট্ট ছেলেটি। তবে সেটাকে ঠিক হাঁটা না বলে হাঁটা আর দৌড়নোর মাঝামাঝি একটা কিছু বলাই ভালো। পাছে ছুটে পালিয়ে না যায় তাই তাঁর একটি হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিল ঠাকুরদা।
খোলা হাত দিয়ে ধান গাছের গায়ে হাত বোলাচ্ছিল ছেলেটি। তাতে ধান খেতের একাংশে ঢেউ খেলছিল, ঠিক যেমন দখিনা বাতাসের সময় হয়। ধান গাছে জল দিল কে? জল নয়, ওগুলো শিশির। শিশির কী? অত তোকে বলতে পারবো না। নাতির প্রশ্নে জেরবার ঠাকুরদা। তবে নাতির মুখ বন্ধ হওয়ার জো নেই। শিশির ভেজা হাত শুঁকে ফের নাতির প্রশ্ন, শিশিরের গন্ধ নেই কেন? বিরক্ত ঠাকুরদা বলে ওঠে, এমন করলে কিন্তু প্যান্ডেলে নিয়ে যাবো না। আনন্দ মাটি হওয়ার ভয়ে চুপ করে যায় ছেলেটি। উত্তর না পেয়ে ঠাকুরদার পাজামায় হাত মোছে। এই করতে করতেই প্যান্ডেলের কাছাকাছি চলে আসে তাঁরা। তখন আর কে কাকে সামলায়! এক ঝটকায় ঠাকুরদার হাত ছাড়িয়ে নির্মীয়মান বাঁশের প্যান্ডেলে দিকে দৌঁড় দেয় ছেলেটি। প্যান্ডেলের খানিকদূরে আম গাছের ছায়ায় এসে বসেন পাহারাদার ঠাকুরদা।
আশ্বিনের সকালে ছোট্ট ছেলেটির আনন্দের ছোঁয়ায় দোমোহনি রেলমাঠের পুজো প্যান্ডেল প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল। এ যেন স্বয়ং ঈশ্বরের ছোঁয়া। রেল মাঠের প্যান্ডেলে এখনও কাপড় লাগেনি। তাতে অবশ্য আনন্দে ভাঁটা পারেনি কারোরই। মাঠের এককোণে ছোট্ট শিবমন্দির। সেখানেই ভীড় করেছেন এলাকার প্রবীণরা। জমিয়ে আড্ডা চলছে। পলহোয়ে থেকে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, জ্যোতি বসু আলোচনা থেকে বাদ পড়ছে না কেউই। খানিক দূরেই সারিসারি ভাঙাচোরা রেল কোয়ার্টার। সব ব্রিটিশ আমলের। কোনওটির ছাদ নেই, তো কোনওটির দেওয়াল খসে পড়ছে। তারই একটির দিকে আঙুল তুলে ইশারা করে একজন জানালেন, ওই ওটাতে থাকতেন শীর্ষেন্দু ও তাঁর পরিবার।
রেল মাঠের দু’শো মিটারের মধ্যেই রয়েছে দোমোহনির কাঁঠালবাড়ি কালীমন্দির। মন্দিরের পাশের মুক্তমঞ্চেই পুজোর আয়োজন হয়েছে। এটাই দোমোহনির সবথেকে পুরোনো পুজো। কেউ বলেন, ৯৩ বছর, কারও মতে ১০৩। আগে পুজো হত কাঠালবাড়ি পাঠাগার ও ক্লাবের উদ্যোগে। বহু বছর পাঠাগারের দরজা খোলেনা। ক্লাবের অস্তিত্বও আর নেই। স্থানীয়দের ধারণা, ভেতরের বইপত্র এতদিনে হয়ত উঁইপোকার পেটে চলে গিয়েছে। বর্তমানে নাম বদলেছে পুজো কমিটির। এখন কাঠালবাড়ি সার্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির ব্যানারেই পুজো হয়।
একসময় দোমোহনিকে বলা হত রেলনগরী। এখনও স্থানীয়রা হুইসল শুনে ট্রেনের নাম, সময় বলে দিতে পারেন। যেমনটা বললেন সত্তোরর্ধ আনন্দ বর্মন। আরপিএফ ব্যারাকের সামনে দাঁড়িয়ে পুজোর কথা হচ্ছিল। দূর থেকে ভেসে আসা ট্রেনের আওয়াজ শুনে বললেন, পদাতিক যাচ্ছে। আজ একটু লেটে চলছে। দোমোহনির আদি রেল স্টেশনটি দুয়োরানীর মতই। দিনে একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন আর কখনও মালগাড়ি, যাতায়াত বলতে ওইটুকুই। অভিমানি স্টেশন তাই নীরব, নিস্তব্ধ। স্টেশনের সামনে ছোট্ট একটা চায়ের দোকান। বেচাকেনা নেই বললেই চলে। পুজোর চারদিন অবশ্য জনমানবহীন স্টেশন চত্বর ভরে থাকে দর্শনার্থীদের ভীড়ে। কারণ, স্টেশন ঘেঁষেই বিদ্যুৎসংঘের পুজো হয়। ১৯৫৪ সাল থেকেই ওই পুজো হচ্ছে। তখন কেনাকাটা হয় রমরমিয়ে। চায়ের দোকানের সামনে রকমারি তেলেভাজার দোকান বসে। বেলুন, খেলনা, এগরোল, চাউমিন পাওয়া যায় সবই।
ইস, দুর্গা যদি বছরভর থেকে যেত! আফসোস ঝরে পরে বিদ্যুৎসংঘের সম্পাদক বিপ্লব সুরের গলায়। এক সময় ব্রিটিশ শাসক পলহোয়ে থাকতেন দোমোহনিতে। তাঁর নামে একটি স্কুলও আছে। হোয়েদের দোতলা কাঠের বাংলো এখন ভেঙে পরার মুখে। তবে ঘোরায় চড়ে রাতের অন্ধকারে হোয়েদের ভুত নাকি এখনও দোমোহনির বিভিন্ন এলাকায় টহল দেন। আচ্ছা, পুজোর কয়েকদিন অত আলো, বাজি আর ডিজের আওয়াজে হোয়েদের ভুত কী বাংলো ছেড়ে বের হবেন? প্রশ্ন শুনে হো হো করে হাসেন এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সুবোধ দাস। সাহেবরা গান-বাজনা পছন্দ করতেন। ওর জন্য আলাদা চেয়ার রেখে দেব- হাসতে হাসতে বলেন সুবোধ।
দত্তপাড়ায় দেবীদুর্গার আরাধনায় মেতেছেন সমাজের আসল দুর্গারা। ঘর-সংসার সামলে ছুটছেন চাঁদা তুলতে। তাঁরা যে সব পারেন সেটা বুঝিয়ে দিতে চান উমা সার্বজনীন মহিলা দুর্গাপুজো কমিটি। তিস্তাপারের মেয়েরা গঙ্গাপারের মেয়েদের থেকে পিছিয়ে নেই সেই বার্তা দেওয়ার চেষ্টাই বা কম কী?
সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে ঢলে পরছে। টোটোর ছাদে বেঁধে একটা পুরোনো কাঠের চৌকি নিয়ে যাচ্ছিলেন সুকুমার বিশ্বাস। গন্তব্য জুনিয়ার কলোনি। ডামারজোন সেতুর উপর দাঁড়িয়ে ঝাঁকুনিতে ঢিলে হয়ে যাওয়া দড়ি টেনে বাঁধছিলেন। কী করবেন ভাঙাচোরা চৌকি দিয়ে পুজোর সময় তেলেভাজার দোকান দেব। ছেলেটা একটা জামা কিনে দিয়েছি। প্যান্ট আর জুতোর টাকা হয়নি। চৌকিটা একজনের কাছ থেকে চেয়ে আনলাম। প্যান্ট আর জুতোর দামটুকুতো উঠে যাবেই। চোখেমুখে আনন্দ ভেসে ওঠে সুকুমারের। দড়ি বাঁধা শেষ করে টোটো চলতে শুরু করে। টোটোতে বসেই রাস্তার ধারে কালী মন্দিরে দিকে তাকিয়ে হাত জোড় করে মাথা নামিয়ে প্রণাম করে সে। প্রার্থনা হয়ত একটাই, আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে। সুকুমারদের আশাপূরণেই হয়ত দেবী প্রতিবছর পালা করে মর্তে আসেন। একটা প্যান্ট আর জুতো উপহার দিতে, দত্তপাড়ার উমাদের সাহস জোগাতে, প্রবীণদের নস্টালজিক করে তুলতে আর ছোটদের অনাবিল আনন্দ দিতে।
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ ঘরের মাঠে জয় দিয়ে আইপিএলের গ্রুপ লিগের যাত্রা শেষ করল দিল্লি…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ মঙ্গলবার বারাণসীর বিজেপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। আর…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ পিএসজি ছেড়ে এবার কিলিয়ান এমবাপে পাড়ি দিচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদে। গত সাত…
দার্জিলিং: দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) পথে মৃত্যু হল এক বাংলাদেশি পর্যটকের (Bangladeshi tourist dead)। মৃতের নাম শেখ…
গাজোলঃ জল জীবন মিশন প্রকল্পের পাইপ চুরি করতে এসে হাতেনাতে পাকড়াও হল সাত দুষ্কৃতী। দুষ্কৃতী…
চোপড়া: সম্প্রতি জল জীবন মিশন প্রকল্পের অন্তর্গত একটি পাইপ খনন করা হয়। পাইপ পাতার সেই…
This website uses cookies.