সানি সরকার, শিলিগুড়ি: পুজোর উদ্বোধনের সাক্ষী থাকতে ভিড়টা নেহাত কম ছিল না শক্তিগড়ে। কিন্তু হঠাৎই বৃষ্টি যেন উৎসব আমেজে জল ঢেলে দিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়ালি উদ্বোধনের ডিউটিতে থাকা পুলিশ কর্মীরা ভিজলেও, স্থানীয়রা যে যেমন পারলেন দৌড়ে মাথা-শরীর বাঁচালেন গাছতলায় বা কারও বাড়ির বারান্দায়। এমন ভিড়ে প্রশ্ন উঠল, নাছোড় বৃষ্টি কবে বিদায় নেবে? এবারও কি ভিজতে হবে পুজোর দিনগুলিতে?
সরকারিভাবে উত্তরবঙ্গ থেকে বর্ষা বিদায়ের ঘোষণা এখনও করেনি আবহাওয়া দপ্তর। করার কথাও নয়। কেননা, উত্তরবঙ্গ থেকে সাধারণত বর্ষা বিদায় নেয় অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষে। তার মধ্যে এবার বর্ষা শুরু হয়েছে দেরিতে। আবার গত বছরের অভিজ্ঞতাটাও অনেকের মনে টাটকা রয়েছে। ফলে উদ্বেগ তো থাকবেই। তবে বর্তমান আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতির পরিবর্তন রবিবার যে ঘটবে, তার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। মহালয়ার সকাল ভিজিয়ে এবছরের মতো বর্ষা বিদায় নিতে চলছে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। বাংলাদেশ সংলগ্ন উত্তরবঙ্গের ওপর একটা ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ায় চলতি বৃষ্টি এবং তার জেরে পুজোর প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়া দপ্তরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা। তিনি বলছেন, ‘শনিবারের পর ঘূর্ণাবর্তের তেমন প্রভাব আর থাকবে না। ফলে পুজোর দিনগুলিতে মনোরম পরিবেশ থাকবে আশা করি। কোথাও বৃষ্টি হলেও তা যৎসামান্য। পুজোর সময় অনেক বছরই বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে বা উত্তরবঙ্গের উপর ঘূর্ণাবর্ত অবস্থান করে পুজোকে মাটি করেছে। কিন্তু এ বছর এমন আশঙ্কা নেই।‘
পুজোর দিনগুলি নিয়ে আবহাওয়া দপ্তর আশার বাণী শোনালেও, মহালয়ার দিন নিয়ে তেমন বার্তা পাওয়া যায়নি। বরং ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে শুক্র এবং শনিবার হিমালয় সংলগ্ন উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং কালিম্পং জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কার্যত মহালয়ার দিন থেকেই পুজোর আমেজ শুরু হয়ে যায় বাংলায়। শিলিগুড়িতে দিনটি বিশেষ মাত্রা রাখে। পিতৃতর্পণকে কেন্দ্র করে মহানন্দা, বালাসনের ঘাটে যেমন ভিড় জমে, তেমনই প্রচুর মানুষ রাস্তায় বেড়িযে পড়েন, কাছেপিঠে ঘুরতে চলে যান। ‘শনিবার সকালে যদি বৃষ্টি হয়, তবে তো মহালয়ার দিনটাই নষ্ট হয়ে যাবে’, উত্তর ভারতনগরের পুজো মণ্ডপের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন তৃষা বসু।
দফাওয়াড়ি বৃষ্টি দেখে পুজোর দিনগুলি নিয়ে যেমন চিন্তায় পড়েছে উৎসবমুখর বাঙালি, তেমনই উদ্বেগে পুজো উদ্যোক্তারা। কেননা, বৃষ্টিতে একেই এ বছর মণ্ডপ তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটেছে বারবার। তার মধ্যে যখন ফাইনাল টাচ দেওয়ার কথা, তখনও রয়েছে ঘূর্ণাবর্তের বৃষ্টি। ফলে মণ্ডপ শেষ হবে কবে, চিন্তায় রয়েছেন ডেকোরেটার্স শিল্পীরা। কুমারটুলির মৃৎশিল্পীরাও উদ্বিগ্ন। বৃহস্পতিবার বিকেলের বৃষ্টি থেকে প্রতিমা বাঁচাতে প্লাস্টিকের আচ্ছাদন দিতে দিতে বিধান পাল বললেন, ‘নাছোড় বৃষ্টি সমস্ত পরিকল্পনাতেই জল ঢেলে দিচ্ছে। বাকি দিনগুলিতেও যদি বৃষ্টি হয়, তবে আর রক্ষা নেই।‘