কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি ও র্যাশন কেলেঙ্কারি মামলার তদন্তের নামে বেছে বেছে তৃণমূলের মন্ত্রী ও নেতাদের হেনস্তা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। র্যাশন দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও দাবি করেছেন বিজেপি ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ষড়যন্ত্র করে তাঁকে ফাঁসিয়েছেন।
এবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনলেন রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ও কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা। শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে গোপাল সাহাকে পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় টানা ২২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়েছে ইডি। এরপরই শনিবার গোপাল সাহ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে সরব হয়ে বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ বা তথ্য ইডি’র হাতে নেই। আমাকে তিনবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে। আমি প্রতিবারই সহযোগিতা করেছি। কিন্তু অহেতুক হেনস্তা কেন করা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।’ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে আরও বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু।
পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় উত্তর ২৪ পরগনা সহ রাজ্যের একাধিক পুরসভায় তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। বছর দুয়েক আগে পর্যন্ত দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন সুজিত বসু। দক্ষিণ দমদম পুরসভাতেও হানা দিয়েছিল ইডি। তারপরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুজিত বসুকে তলব করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু তিনি সেই হাজিরা এড়িয়েছিলেন।
শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সুজিত বলেন, ‘পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আমার নাম বলানোর জন্য আমার প্রাক্তন আপ্তসহায়ক তথা দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই দত্তর ওপর মানসিক চাপ দেওয়া হচ্ছে। পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে আমি কোনওভাবেই যুক্ত নই। রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। আমাকেও পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় যুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। আমার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণই তারা হাতে পায়নি। এই ধরনের প্রতিহিংসার রাজনীতি কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যখন যা তথ্য চেয়েছে, আমি দিয়েছি। কিন্তু কেন অহেতুক হেনস্তা করা হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। তদন্তে সহযোগিতার জন্য যতবার আমাকে ডাকা হবে, আমি যাব। কিন্তু এই হেনস্তা না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।’
তবে তৃণমূলের মন্ত্রী-নেতাদের এই মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিরোধীরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘এরা চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। উনি যে মন্ত্রীসভার সদস্য, সেখানকার দুজন মন্ত্রী জেলে রয়েছেন। তাঁর কিছু বলার থাকলে তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে তদন্তকারী সংস্থাকে সহযোগিতা করুন।’ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘যে দলের নেতারা একে একে সকলেই শ্রীঘরে ঢুকছেন, সেখানে এই ধরনের কথা বলে নিজেদের কেন আড়াল করার চেষ্টা করছেন? আসলে সকলেই ভয়ে রয়েছেন। তাঁরা ভাবছেন কখন ইডি, সিবিআই চলে আসবে।’