উত্তর সম্পাদকীয়

জয়ন্তী-রায়ডাক তটে আজও জীবন বিবর্ণ

  • শৌভিক রায়

সলসলাবাড়ি পার করে উত্তরমুখী রাস্তা ধরতেই রঙের মেলা। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, জারুল সহ অজস্র ফুলের মেলায় ভয়ংকর গরম নিমেষে উবে গেল। খানিক আগে ফালাকাটা-আলিপুরদুয়ার পথ ধুলো মাখিয়েছে শরীরে আর মনে। থমকে আছে কাজ। কবে হবে কে জানে!  সেই ধুলোও যেন ধুয়ে গেল রঙের বন্যায়!  গ্রীষ্মেরও যে এরকম রং থাকতে পারে, কে আর ভেবেছিল!

শামুকতলা পেরিয়ে হাতিপোঁতা-তুরতুরি খণ্ডের দিকে এগোতে, সেই রঙে যোগ হল চা বাগান আর বনভূমির সবুজ। বেশ কিছু বিখ্যাত চা বাগান আছে এদিকে। সেগুলির কোনওটিতে গলফকোর্সের দেখাও মেলে। কিছু বাগান সীমিত ক্ষমতার মধ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবাও দেয়। কিন্তু চা বাগানের হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো সেই পুরোনো দিনের। অভাব চিকিৎসকেরও। শহরের সুযোগসুবিধে ছেড়ে কে আর সপ্তপদীর কৃষ্ণেন্দু ডাক্তারের মতো এইসব নিঝুম চা বাগানে পড়ে থাকতে চান! ফলে বাগান কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকলেও উপায় থাকে না। তাই একটু গুরুতর রোগের ক্ষেত্রে ভরসা সেই আলিপুরদুয়ার কিংবা আরও একটু দূরের কোচবিহার।

স্বাস্থ্য পরিষেবার পাশাপাশি একটু যদি উঁকি দেওয়া যায় শিক্ষাক্ষেত্রে তাহলে অবস্থাটা ঠিক কীরকম?  কিছুদিন আগে পর্যন্তও কিন্তু এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশের গন্তব্য ছিল আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন স্কুল। অবস্থা অবশ্যই বদলেছে। সরকারি স্কুলের পাশাপাশি বেসরকারি স্কুলের রমরমাও বেড়েছে। কিন্তু তাতে শিক্ষার কতটা উন্নতি হচ্ছে? জটিল প্রশ্ন। কেননা অক্ষরজ্ঞান মানেই তো আর শিক্ষা নয়!

ময়নাবাড়ি, ভুটানঘাট, ফাঁসখাওয়া, রায়ডাক ইত্যাদি অঞ্চলে এখনও বস্তির প্রাথমিক স্কুলগুলিই পড়ুয়াদের ভরসা। আরও বেশি পড়বে যারা, অটোরিকশার মতো বাহনে তারা গাদাগাদি করে ছুটবে অন্যত্র। কেননা সরকারি বাস অপ্রতুল। অতীতে জয়ন্তী ছুঁয়ে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যে রাস্তা এই অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে অসম যেত, সে তো কবেই পরিত্যক্ত হয়েছে। জাতীয় সড়ক বেশ কিছুটা দূরে। সেই সড়কও এখন ফোর লেন। রাস্তার ধারে হুহু করে বাড়ছে জমির দাম। আর জয়ন্তী-রায়ডাক তটভূমির এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধীরে ধীরে যেন আরও পিছিয়ে পড়ছে।

এখানেও ক্রমবর্ধমান হোমস্টের সংখ্যা দেখে বিস্মিত হলাম না। ‘চাকরিবাকরি নেই, চা বাগান ছাড়া কোনও শিল্প নেই। কী আর করব! ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এই উদ্যোগ’, বললেন এক হোমস্টের মালিক। জানা গেল, সারা বছর নাকি ভিড় থাকে। এত লোক আসে? খোঁজ পায় কীভাবে? পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটেছে অবশ্যই। বহু মানুষও আগ্রহী হচ্ছেন উত্তরকে নিবিড়ভাবে জানতে। শহরের বহু মানুষও লগ্নি করছেন এই ব্যবসায়। যেহেতু ট্রাইবাল ল্যান্ড কেনার ঝক্কি অনেক। সুতরাং একটু ঘুরিয়ে অন্য রাস্তা। তাদের পরিচিতিও কাজ দিচ্ছে বছরভর ট্যুরিস্ট জোগানে। কিন্তু মূল মালিকের লাভ হচ্ছে কি তাতে? ‘জমি, বাড়ি নিজেরই থাকছে। মুনাফা ভাগ হচ্ছে। উপায় কী তাছাড়া? হোমস্টে করবার পয়সা কোথায়?’ ম্লান হাসলেন আদিবাসী মানুষটি।

উত্তরের বহু অঞ্চলের মানুষই এরকম ম্লান হাসেন। বছরের পর বছর যায়। নতুন দিন আসে। নতুন সরকার আসে। বোবা প্রকৃতিও রং ছড়ায়।

কিন্তু রং কি আদৌ লাগে উত্তরের জীবনে?

(লেখক শিক্ষক। কোচবিহারের বাসিন্দা)

Uttarbanga Sambad

Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.

Recent Posts

Theft Case | দিনদুপুরে সরকারি স্কুলে চুরি

নিশিগঞ্জ: দিনদুপুরে সরকারি স্কুলের চুরির (Theft Case) ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল কোচবিহারের (Coochbehar) নিশিগঞ্জে (Nishiganj)।…

32 mins ago

জাতীয়স্তরে বিজ্ঞানমন্থন প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় জলপাইগুড়ির অদিতি

নাগরাকাটা: ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি) ও ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ সায়েন্স মিউজিয়াম…

35 mins ago

Sand smuggling | দিনে দুপুরে ট্রলি বোঝাই করে বালি পাচার! নাম জড়াল তৃণমূল নেতার

রতুয়া: দিনে দুপুরে পাচার করা হচ্ছে ট্রলিবোঝাই বালি। এই বালিপাচার চক্রে নাম জড়িয়েছে স্থানীয় তৃণমূল…

58 mins ago

Smriti Mandhana | ‘এমন প্রত্যাবর্তনে দম লাগে’, বিরাটদের প্রশংসায় স্মৃতি মান্ধানা

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: চেন্নাইকে হারিয়ে আইপিএলের প্লে-অফে পৌঁছে গিয়েছে বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।…

1 hour ago

Lok Sabha Election 2024 | উন্নয়নের দাবিতে ভোট বয়কট উত্তরপ্রদেশ ও ঝাড়খন্ডের ৩ গ্রামে

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ৬ টি রাজ্য এবং ২ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে মোট ৪৯…

1 hour ago

Drinking water crisis | স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও পরিশ্রুত পানীয় জল থেকে বঞ্চিত গাজোলের গ্রাম

গাজোল: স্বাধীনতার ৭৫ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। চারিদিকে হোর্ডিং-ব্যানারে বিকশিত ভারতের প্রচার। অথচ এখনও বহু গ্রামে…

1 hour ago

This website uses cookies.