জলপাইগুড়ি: সমাজসেবার সঙ্গে যুক্ত অনেকদিনই! করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, নিয়মিতভাবে এখনও জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনের আবর্জনা পরিষ্কার করেন, আবার পৌষ পার্বনের সময় শিশুদের পিঠেপুলি খাওয়ান, এমনকী পরীক্ষার আগে পড়ুয়াদের হাতে পেন ও ফুল তুলে দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এহেন কাজকর্মের জন্য শহরে অনেকেই চেনেন পেশায় জলপাইগুড়ি রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ের (Jalpaiguri Rashtriya Balika Vidyalaya) শিক্ষাকর্মী শান্তি মুখুটিকে। এখন অবশ্য তিনি অবসরপ্রাপ্ত। বুধবারই কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু অবসরের শেষ দিনে যে শান্তিবাবু সকলকে এভাবে চমকে দেবেন তা অবশ্য ভাবতে পারেননি কেউ। সাকুল্যে তাঁর অবসরকালীন প্রাপ্য দাঁড়িয়েছে ২০ লক্ষ টাকা। আর সেই টাকার ৫ লক্ষ টাকাই তিনি দান করতে চান আর্তের সেবায় অ্যাম্বুল্যান্স কেনার জন্য।
মনের গোপনে থাকা এই ইচ্ছের কথা প্রথম চিঠি লিখে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে (Droupadi Murmu) জানান শান্তি মুখুটি। রাষ্ট্রপতিও শান্তিবাবুর এহেন ভাবনার কথা জেনে মুগ্ধ। তিনিও সঙ্গে সঙ্গে ধন্যবাদ জানিয়ে জবাবী চিঠি পাঠান শান্তি মুখুটিকে। এদিন নিজের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পোশাকের পকেট থেকে সেই চিঠিটি বের করেন শান্তিবাবু। চিঠিতে শান্তি মুখুটির প্রস্তাব রূপায়ন করবার জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিবকে অনুরোধ করেছে রাষ্ট্রপতির সচিবালয়। দীর্ঘ ২৮ বছর শিক্ষাকর্মী হিসেবে কাজ করবার পর এটাই বড় প্রাপ্তি ছিল এই প্রবীণ শিক্ষাকর্মীর।
শান্তিবাবু বলেন, ‘চাকরি জীবনে রোজগার করেছি।সমাজের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আছে। সীমিত আর্থিক ক্ষমতার মধ্যে অ্যাম্বুল্যান্স দানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অবসরের পর সাকুল্যে ২০ লক্ষ টাকা পেয়েছি। প্রাপ্ত অর্থ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য আলাদা করে রেখেছি। প্রয়োজনে আরও অর্থ দেব।’ শান্তিবাবুর এই উদ্যোগে মুগ্ধ অনেকেই। শিক্ষক আন্দোলনের নেতা বিপ্লব ঝাঁ বলেন, ‘শান্তি মুখুটি হলেন অনুসরণ যোগ্য শিক্ষাকর্মী। দুঃস্থ মানুষের সেবায় যে প্রয়াস শান্তিবাবু নিয়েছেন তা অভিনন্দন যোগ্য।’ উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী তথা প্রাক্তন অধ্যাপক ডঃ আনন্দ গোপাল ঘোষ বলেন, ‘শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা হলেন সমাজের আদর্শ। শান্তি মুখুটি যে কাজটি করবার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সকলের নজর কাড়বে।’