Sunday, May 19, 2024
Homeকলামবিশ্বাস হারিয়েছে নির্বাচন কমিশন

বিশ্বাস হারিয়েছে নির্বাচন কমিশন

  • রন্তিদেব সেনগুপ্ত

প্রশ্নটা উঠেছে। উঠেছে নির্বাচন কমিশনকে কেন্দ্র করে। প্রশ্নটা উঠেছে যে, এবারের লোকসভা ভোটে প্রথমাবধি নানাবিধ অস্বাভাবিক আচরণ করে নির্বাচন কমিশন কি নিজেই নিজের বিশ্বাসযোগ্যতার মূলে কুঠারাঘাত করছে না? এবার ভোটের শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশনের নানাবিধ কার্যকলাপ বিভিন্ন মহলে নানারকম সন্দেহ এবং সংশয়ের জন্ম দিয়েছে। যত দিন যাচ্ছে ততই এই সংশয় দূর হওয়ার বদলে বরং আরও দানা বাঁধছে। ফলে এমন প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ তো? দুঃখের হলেও এটা বলতে হচ্ছে যে, এবার অন্তত অনেক ক্ষেত্রেই নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি।

অতি সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের আর একটি কাজ বিভিন্ন মহলে কমিশন সম্পর্কে সন্দেহ এবং সংশয়কে দৃঢ় করেছে। তার চেয়েও বড় কথা এই সন্দেহ এবং সংশয় দূর করতে নির্বাচন কমিশন সদর্থক কোনও ভূমিকাও এখনও পর্যন্ত দেখাতে পারেনি।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের কোন কাজকে কেন্দ্র করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে? আপনারা প্রত্যেকেই জানেন, কমিশনের জানানো প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী প্রথম দফার নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬০ শতাংশের কিছু কম এবং দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের পর ভোট পড়েছিল ৬১ শতাংশের কিছু কম। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় এই হার যথেষ্টই কম। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছিল প্রথম এবং দ্বিতীয় দফায় এত কম হারে ভোট পড়ায় শাসকদল চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে ওই দুই দফায় হিন্দি বলয়ের এমন কিছু অংশে ভোট হয়েছে যেখানে শাসকদল মোটেই এবার স্বস্তিতে ছিল না। সেই সব অংশে কম ভোট পড়া শাসকদলের চিন্তা বাড়িয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।

কিন্তু এগারো দিন পরে ভোট পড়ার এই হারটাই রাতারাতি গেল বদলে। এগারো দিন পর কমিশন যে তথ্য প্রকাশ করল তাতে দেখা গেল ওই দুই দফাতেই ভোটদানের হার ৬ শতাংশ করে বেড়ে গিয়েছে। ৬ শতাংশ বেড়ে যাওয়া কিন্তু মুখের কথা নয়। ৬ শতাংশ ভোট কিন্তু আমূল চিত্রটিই বদলে দিতে পারে। ইতিমধ্যেই সিপিএম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বেশ কিছু অরাজনৈতিক সংগঠন এবং ব্যক্তিত্ব এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, এটা কোনও সাধারণ ঘটনা নয়। এর পিছনে নিশ্চিত কোনও খেলা আছে।

এই যে নিশ্চিত কোনও খেলা আছে এই সংশয়টি আরও দৃঢ় হচ্ছে অন্য বেশ কয়েকটি কারণেও। এর আগের সব নির্বাচনেই, এমনকি ২০১৯-এর নির্বাচন পর্যন্ত, ভোটগ্রহণের দিন কমিশন প্রাথমিকভাবে ভোটদানের শতকরা হার জানালেও তার চব্বিশ ঘণ্টার ভিতরেই ভোটগ্রহণের চূড়ান্ত হার জানিয়ে দিত। এর ব্যতিক্রম কখনও হয়নি। তাহলে এবার এগারো দিন লাগল কেন চূড়ান্ত হার প্রকাশ করতে?

কী করছিল এই এগারো দিন কমিশন? এর কোনও উত্তর কমিশন কিন্তু দিতে পারছে না। ব্যালট পেপারে ভোট হলে ফল প্রকাশ করতে অনেক বিলম্ব হবে বলে যে কমিশন সওয়াল করেছিল, ভোটের শতকরা হার প্রকাশ করতেই তার এগারো দিন লেগে গেল?

দ্বিতীয়ত, এবারের নির্বাচনে এখনও পর্যন্ত কমিশন প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা প্রকাশ করেনি। শুধুমাত্র ভোটের হার প্রকাশ করেছে। কেন? এর আগের সব নির্বাচনেই ভোটদান পর্ব মেটার পর কমিশন প্রদত্ত ভোটের হার প্রকাশ করত। এবার তার ব্যতিক্রম কেন? এর কোনও ব্যাখ্যা কিন্তু কমিশন দিচ্ছে না। এছাড়া প্রত্যেকটি লোকসভা এবং বিধানসভা কেন্দ্রে নথিভুক্ত ভোটার সংখ্যা এখনও কমিশনের ওয়েবসাইটে অমিল। কেন? এটা জানার অধিকার তো দেশের প্রতিটি নাগরিকেরই রয়েছে। ভোট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনও লোকসভা বা বিধানসভা আসনে নথিভুক্ত ভোটারের সংখ্যা যদি জানা না যায়, তাহলে ভোটদানের হারের যে হিসাব দেওয়া হচ্ছে তা অর্থহীন। ভোট বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, এর আগেও দেখা গিয়েছে ভোটদানের প্রাথমিক হারের থেকে চূড়ান্ত হারের সামান্য কিছু হেরফের থাকে (মোটামুটি ০.০৫ – ১ শতাংশ)। কিন্তু এরকম ব্যাপক ফারাক থাকে না। এটা সব অর্থেই অস্বাভাবিক।

এই সন্দেহ এবং সংশয় দূর করবে কে? এটা দূর করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনের কোনও আগ্রহই যেন নেই। ভোটদানের হারের এই হেরফেরকে কেন্দ্র করে যেসব প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলিকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে কমিশন। ভোট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসলে উত্তর দেওয়ার মতো কোনও যুক্তিই কমিশনের হাতে নেই।

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের সময় থেকেই কমিশনকে ঘিরে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। যেভাবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে মুখ্য নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করা হয়েছে, সেদিন থেকেই সন্দেহ দানা বেঁধেছে যে কতটা নিরপেক্ষ থাকতে পারবে এই কমিশন। নিরপেক্ষ থাকতে যে কমিশন পারছে না সেটি প্রতি পদক্ষেপে কমিশন নিজেই বুঝিয়ে দিচ্ছে। সে প্রধানমন্ত্রীর ঘৃণাভাষণের বিরুদ্ধে যথেষ্ট কড়া অবস্থান নেওয়ার দ্বিধাতেই হোক বা ভোটের হার নিয়ে এই বিস্ময়কর নীরবতা অবলম্বনেই হোক।

নিজের তলিয়ে যাওয়া বিশ্বাসযোগ্যতা যদি এরপরও ফেরাতে ব্যর্থ হয় কমিশন, তাহলে সমগ্র ভোট প্রক্রিয়াটিকেই প্রহসন বলে মনে করবে পাঁচ পাবলিক।

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img

LATEST POSTS

IPL | ধোনির চেন্নাইকে হারিয়ে আইপিএলের চতুর্থ দল হিসাবে শেষ চারে বেঙ্গালুরু

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: আইপিএলের চতুর্থ দল হিসাবে প্লে অফে উঠল বেঙ্গালুরু। বেঙ্গালুরু বনাম চেন্নাইয়ের  গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে টসে জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেন...

Siliguri | তিস্তায় জলস্তর বেড়ে আটক ২, উদ্ধারে শুরু তৎপরতা

0
শিলিগুড়ি: পাহাড়ে প্রবল বৃষ্টির জেরে তিস্তার জলস্তর হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় বিপত্তি ঘটলো রংপোতে। নদীতে আটকে পড়লেন দু'জন। তবে তাঁরা স্থানীয় না পর্যটক তা স্পষ্ট...

Patiram | ঘুমের মধ্যেই বেহুঁশ করে চুরি, যাওয়ার আগে আইসক্রিম খেলো চোরের দল

0
পতিরাম: এ যেন ফিল্মি কায়দায় চুরি। পরিবারকে গ্যাস স্প্রে করে অচৈতন্য করে বাড়ির সর্বস্ব চুরি করল চোরের দল। যাওয়ার আগে খেয়ে গেল আইসক্রিম। নগদ...

Bomb Recovered | বিস্ফোরণের পর ফের উদ্ধার জারভর্তি বোমা, নিষ্ক্রিয় করল বম্ব স্কোয়াড

0
কালিয়াচক: কালিয়াচকের রাজনগর মডেল গ্রামে বোমা বিস্ফোরণের পর আরও এক জার বোমা উদ্ধার (Bomb recovered) হল ঘটনাস্থল থেকে। ওই জার থেকে ৯টি প্লাস্টিকের বলবোমা...

Minority Scholarship Scam | স্কলারশিপের টাকা আত্মসাৎ! অভিযুক্ত ২ জনকে হেপাজতে চায় সিআইডি

0
বিশ্বজিৎ সরকার, করণদিঘি: মাইনোরিটি স্কলারশিপের (Minority Scholarship Scam) কোটি কোটি টাকা তছরুপের দায়ে অভিযুক্ত মহম্মদ ফইজুল রহমান ও আবদুস সামাদকে নিজেদের হেপাজতে নিতে চায়...

Most Popular