সৌরভ রায়, কুশমণ্ডি: প্রতিবার ইলেক্ট্রিক মিটারের রিডিং (Electric Meter Reading) নিতে গিয়েই নজরে পড়ে, মিটারের নীচ থেকে হুক করা হয়েছে। একদিন সেকথা বাড়ির মালিককে জানান রিডার। তাতেই বিপত্তি। বাড়ির মালিক ও তাঁর দুই ছেলে বেধড়ক পিটিয়ে বেহুঁশ করে দেন মিটার রিডারকে। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের (Dakshin Dinajpur) কুশমণ্ডি (Kushmandi) ব্লকের মহিপাল সংলগ্ন পুকুরপাড়া গ্রামে। শনিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটলেও বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে রাত ১০টার পর। এই ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পাশাপাশি কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ দপ্তরের বুনিয়াদপুর ডিভিশনের ডিভিশনাল ম্যানেজার সুমন সেনগুপ্ত।
আক্রান্ত রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের মিটার রিডারের নাম মিজানুর রহমান। তিনি জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনি পুকুরপাড়া গ্রামের মিটার হোল্ডার জিন্নাতুন নেছার বাড়িতে বিলিংয়ের জন্য যান। বিল করার জন্য ছবি তোলার সময় মিটারের নীচ থেকে হুকিং দেখতে পান। কেন বিদ্যুৎ চুরি করছেন, সেই প্রশ্ন করতেই জিন্নাতুন নেছার স্বামী আনোয়ার আলি, তাঁর দুই ছেলে আমজাদ আলি ও মহম্মদ মণ্ডল তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। মোবাইল কেড়ে নিয়ে ছবি ডিলিট করবার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তাঁরা বিলিং প্রিন্টার ভেঙে দেন। তিনজন মিলে পেটে বুকে এলোপাতাড়ি লাথি, কিল, চড়, ঘুসি মারতে শুরু করেন। তিনি নিজেকে বাঁচাতে চিৎকার শুরু করলে গ্রামবাসীরা এগিয়ে আসেন। মারধরে একসময় তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। মাথায় জল দিয়ে তাঁকে খানিকটা সুস্থ করেন গ্রামবাসীরাই। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন পাশের গ্রামের কর্তব্যরত দুই মিটার রিডার। তাঁরাই গুরুতর আহত মিজানুরকে বাইকে করে কুশমণ্ডি হাসপাতালে ভর্তি করেন। গঙ্গারামপুরে শারীরিক পরীক্ষার পর তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেন বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মকর্তারা।
বর্তমানে মিজানুরের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে দুপুরে ছুটে আসেন বুনিয়াদপুরের ডিভিশনাল ম্যানেজার সুমন সেনগুপ্ত। হাসপাতালে আহত মিজানুরকে দেখার পর তিনি কুশমণ্ডির স্টেশন ম্যানেজার সহ সদলবলে পুকুরপাড়া গ্রামের জিন্নাতুন নেছার মিটার দেখতে যান। তখনও মিটার থেকে হুকিং স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। এরপর মিটার ও সার্ভিস তার সিজ করে নিয়ে আসেন দপ্তরের আধিকারিকরা।
এই ঘটনায় কুশমণ্ডি থানায় জিন্নাতুন নেছা, স্বামী আনোয়ার আলি এবং দুই ছেলে আমজাদ আলি ও মহম্মদ মণ্ডলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন ভারপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজার জগদীশ বর্মন। ডিভিশনাল ম্যানেজার সুমন সেনগুপ্ত বলেন, ‘গতকালের ঘটনায় কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’
এমন ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীদের মধ্যে। প্রশ্ন উঠেছে মিটার রিডারদের নিরাপত্তা নিয়ে। বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মচারীর উপর হামলাকারী আমজাদ আলি বা তাঁর ছেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। আইসি তরুণ সাহা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ দপ্তরের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু করা হয়েছে। যদিও অপরাধীরা কেউ এখনও ধরা পড়েনি।