মালবাজারঃ ঘড়ির কাঁটায় শুক্রবার রাত তখন প্রায় দুটো। রাত জেগে পড়াশোনা করে সবেমাত্র ঘুমিয়েছে রেনু মুন্ডা। হঠাৎ করেই তার ঘুম ভেঙে যায়। বাড়িতে তখন বুনো দাঁতাল। ঘর ভেঙে সাবাড় করছে মজুত ধান। পাশের কাকুর ঘরে কোনওক্রমে গুটিসুটি মেরে বসে রইল রেনু। সে এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কিছুক্ষণ পরে হাতি বাড়ি ছাড়লে যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায় রেনু ও তার পরিবার। এদিন একপ্রকার তার রাতজাগা। এই পরিস্থিতিতেও শনিবার মাল শহরের পুষ্পিকা উচ্চতর বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছলো মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রেনু মুন্ডা। সে বড়দিঘি উচ্চ বিদ্যালয় এর ছাত্রী।
জানা গিয়েছে, বুনো দাঁতাল হাতির আক্রমণে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর ঘর ভাঙ্গার ঘটনাটি ঘটেছে মাল ব্লকের কুমলাই গ্রাম পঞ্চায়েতে। গ্রামের নাম কান্ত দীঘি কুমার পাড়ার কুচিয়া ধুরা। রেনুর বক্তব্য, “সেই ছোটবেলা থেকেই হাতির হানার কথা শুনেছি। মাধ্যমিক পরীক্ষার মধ্যে রাতেই যে আমাদের বাড়িতে সরাসরি হাতি হানা দেবে তা কস্মিনকালেও ভাবতে পারি নি। কোনওক্রমে চুপ করে বসে প্রাণের রক্ষা পেয়েছি। আজকে ইংরেজি পরীক্ষা দিয়েছি। খুব একটা ভালো পরীক্ষা হয়নি। আতঙ্কেই রয়েছি।”
রেনুর বাবা সুন্দরজিৎ মুন্ডা ছোট চা বাগানের শ্রমিক। সুন্দরজিৎএর কথায়, “হঠাৎ করেই বাড়িতে হাতি ঢুকে পড়েছিল। লাটাগুড়ি বনাঞ্চল থেকেই হাতি এসেছিল। হাতির হামলায় ঘর ভেঙে গিয়েছে। ঘরে মজুত খাদ্যসামগ্রী সাবার করেছে হাতি। মেয়েকে সেই ভোরবেলায় বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে বড়দিঘি বাজারে পৌঁছতে হচ্ছে। তারপর সেখান থেকে আবার মাল শহরের স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। এর মধ্যে হাতির এরকম হানা আমাদের সমস্যা অনেকটাই বাড়িয়েছে।”
লাগোয়া বাঁশবাড়ি এলাকার সোলেমান আলম বলেন, গতকাল রাতে আমাদের এলাকাতেও হাতির হানায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাঁশ বাড়িতে রাতে বন্যপ্রাণ বিভাগের কর্মীরাও ছিলেন। পরিবেশ প্রেমী যুবক রমেশ মাহালি বলেন, ঐ সমস্ত গ্রামে অনেক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রয়েছে। এ সময় হাতির আনাগোনাতে সকলেই দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে। বড়দিঘী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা হাতির আক্রমণে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছাত্রীর ঘর ভাঙার খবর পেয়েছি। ওরা সমস্যায় পড়েছে। আমরা একটি টোটোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ঐ টোটোতেই পরীক্ষার দিনগুলিতে রেনু সকালে বাড়ি থেকে বড়দিঘি বাজার পর্যন্ত পৌঁছবে। তারপর পরীক্ষার স্পেশাল বাসে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাবে। আমরা স্কুল থেকে ওর বাড়ির সহায়তায় কিছু করা যায় কিনা তাও দেখছি। গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুনীতা মুন্ডা বলেন আমি গিয়ে ওই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলব। মালের বিডিও রস্মি দীপ্ত বিশ্বাস বিষয়টির খোঁজ নিচ্ছেন। বন্যপ্রাণ বিভাগের মালবাজার স্কোয়াডের কর্মীরা টহল জারি রেখেছে।