নাগরাকাটা: হাতির হানায় ঘরবাড়ি তছনছ ডুয়ার্সের প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। হামলার তালিকা থেকে বাদ নেই র্যাশন দোকান, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এমনকি স্কুলও। এবার হস্তীযূথের ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ থেকে বাদ গেল না সরকারি প্রতিষ্ঠানের রেস্ট হাউসও। নাগরাকাটার গ্রাসমোড়ে অবস্থিত আঞ্চলিক রাবার গবেষণাকেন্দ্রের রেস্ট হাউসে ঢুকে শুঁড় দিয়ে টান মেরে ফ্রিজের দরজা খুলে কিছু আছে কিনা পরখ করে দেখল মাকনা হাতি। উদরপূর্তির কোনও আইটেম না পেয়ে আক্রোশ যেন আরও চরমে ওঠে। শুধু ফ্রিজ উলটে ফেলে দেওয়াই নয়। তছনছ করে দিয়ে যায় গোটা রেস্ট হাউসকেই।
ঘটনাটি শুক্রবার গভীর রাতের। পরে ডায়না রেঞ্জের বনকর্মীরা খবর পেয়ে গিয়ে ওই হাতি সহ পালের অন্য বুনোদের জঙ্গলে ফেরত পাঠায়। রেঞ্জার অশেষ পাল বলেন, ‘দু থেকে তিনটি দলে ভাগ হয়ে হাতির পাল নানা স্থানে ঢুকে পড়েছে। আমরা সজাগ রয়েছি। রেস্ট হাউসের হামলার বিষয়টি কিছুটা অবাক করা তো বটেই।’
গ্রাসমোড়ের রাবার গবেষণাকেন্দ্র কর্তৃপক্ষেরও হাতির কাণ্ড দেখে চোখ কপালে ওঠার যোগাড়। সেখানকার ইনচার্জ জয়ন্ত সরকার বলেন, ‘রুমের ভেতরে ঢুকে একেবারে বিচ্ছিরি অবস্থা করে গিয়েছে। প্রয়োজন না থাকলে ফ্রিজে আমরা কিছু মজুত রাখি না। খাবার দাবার না পেয়েই হয়তো মাকনাটি ক্ষেপে ওঠে।’ তাঁর সংযোজন, ‘সেখানে একটি বালতিতে অল্প কিছু চাল ছিল। সেটাই সাবাড় করে বালতিটি লাথি মেরে ফেলে দিয়ে যায়। সকালে অনেকটা দূরে ভাঙা বালতিটি মেলে।’
বন দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, রেস্ট হাউসের পেছনের দরজা ভেঙে হাতিটি ভেতরে ঢোকে। আকারে ছোটখাট হাওয়ায় এমন অনধিকার প্রবেশে মাকনাটির কোনও অসুবিধেই হয়নি। এরপরই শুরু হয় ভানুমতির খেল। প্রথমেই নজর পড়ে খয়েরি রঙের ফ্রিজের ওপর। তাতে কিছু না পেয়ে টান দিয়ে মাটিতে ফেলে দেওয়ার পর তছনছ করে চেয়ার টেবিল সহ সমস্ত কিছু। টান মারে জানালার গ্রিল ধরেও। উপরে ফেলে রান্নার গ্যাসের ওভেন, সিলিন্ডার এমনকি হাত ধোওয়ার বেসিনও। এরপর ওই দরজা দিয়েই বাইরে বেরিয়ে রেস্ট হাউসের পাশে অবস্থিত একটি অস্থায়ী রান্নাঘর দুরমুশ করে দেয় বুনোটি।’
বন দপ্তর জানাচ্ছে, ডায়নার জঙ্গল থেকে বেরিয়ে ‘মিশন রাবার গবেষণাকেন্দ্র’ চালায় ১২টি হাতির একটি দল। অন্যদিকে, সেরাতেই ২০টি হাতির অন্য আরেকটি পাল হানা দেয় রেড ব্যাংক চা বাগানে। ৮টি হাতি রাতের অপারেশনের স্থান হিসেবে বেছে নেয় ধরণিপুর চা বাগানকে। শেষের পালটি যাত্রা পথে ১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া লুকসানের কালীখোলা বস্তিতে সেগুন গাছের বাগান লন্ডভন্ড করে দেয়। বছর পাঁচেকের গাছগুলির পরিণতি দেখে এখন মাথায় হাত বাগান মালিক রামকুমার কাটোয়াল, গঙ্গা বাহাদুর ছেত্রী, গোপাল কাটোয়ালদের। তাঁরা বলছেন, ধান চাষ করলে হাতির অত্যাচারে ফসলের এক ছটাকও মেলে না। সেগুন গাছ লাগিয়েও নিস্তার মিলল না। ওই ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়ে গিয়েছে শুধু এক রাতের হামলায়।