প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: গত পাঁচ বছরে সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে মনরেগা প্রকল্পে ১০০ দিনের কাজের চাহিদা হয়েছে ‘আকাশছোঁয়া’৷ চাঞ্চল্যকরভাবে গত মে মাসে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী ৩ কোটি ১৭ লক্ষ পরিবারের সদস্যরা মনরেগা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এবং ১০০ দিনের কাজ করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করেছেন৷ সম্প্রতি এক সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে এই তথ্য৷ করোনা অতিমারির পরবর্তী সময়ে মনরেগা প্রকল্পের সঙ্গে আমজনতার যুক্ত হওয়ার এই বিপুল চাহিদা কার্যত অবাক করেছে বিশেষজ্ঞ ও সমাজতাত্ত্বিকদের৷ অথচ মনরেগা বা ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পকে ইস্যু করে কেন্দ্র ও বিরোধী দলীয় সংঘাত এখনও তুঙ্গে।
একদা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং সংসদে দাঁড়িয়ে এই প্রকল্পকে ‘হাস্যকর’ এবং ‘গর্ত খোঁড়ার কাজ’ বলে বিদ্রুপ করেছিলেন৷ ইউপিএ-১ জমানায় দেশের গ্রামাঞ্চলের গরিব খেটে খাওয়া মানুষের জীবিকা অর্জনের লক্ষ্যে চালু হওয়া মনরেগা প্রকল্পকে বরাবর ব্যাকফুটে ঠেলে এসেছে মোদি সরকার, এমনই অভিযোগ বিরোধীদের। এবার সরকারি সূত্রে সামনে আসা এই পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করে মোদি সরকারকেই পালটা নিশানা করেছে বিরোধী শিবির৷
প্রসঙ্গত, সরকারি সূত্রে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে গোটা দেশেই বেড়েছে ১০০ দিনের কাজে যুক্ত হওয়ার চাহিদা৷ গত মে মাসে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী ৩ কোটি ১৭ লক্ষ পরিবারের সদস্যরা এই ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন৷ ২০২২-২৩ অর্থ বর্ষের মে মাসে ২ কোটি ৬১ লক্ষ, ২০২১-২২ অর্থ বর্ষের মে মাসে ২ কোটি ৬৫ লক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছিল ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে৷ এমনকি করোনা অতিমারি আবহে ২০২০-২১ অর্থ বর্ষের মে মাসেও রেকর্ড পরিমাণ ৩ কোটি ৭৩ লক্ষ মানুষ ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে যুক্ত হয়েছিল৷ চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় এপ্রিলে দেখা দিয়েছিল চাহিদা বৃদ্ধি৷ শুধু এপ্রিলেই সারা দেশের ২ কোটি ৪০ লক্ষ পরিবারের সদস্যরা এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন৷ এই সংখ্যাই বহুগুণ বেড়েছে মে মাসে৷ যাবতীয় পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখে কেন্দ্রীয় স্তরে কর্মরত উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা মনে করছেন, চলতি বছরের প্রথমদিকে চাষাবাদের কাজ শেষ হওয়ার পরই প্রবল অর্থাভাবে, বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী লোকদের কাছে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে মারাত্মকভাবে৷
প্রত্যাশিতভাবেই সূত্র মারফত সামনে আসা কেন্দ্রীয় সরকারি পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করে সরব হয়েছে বিরোধী শিবির৷ তাদের প্রশ্ন, গোটা দেশের গ্রামাঞ্চলে যখন আজও এই মনরেগা প্রকল্পের ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং আমজনতা নিজেদের জীবন বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ১০০ দিনের কাজের দিকেই ঝুঁকছেন তখন কিভাবে এই প্রকল্পের ব্যয়বরাদ্দ কমায় মোদি সরকার? পশ্চিমবঙ্গ সহ একাধিক বিরোধী শাসিত রাজ্যে আবার মনরেগা প্রকল্পের মজুরির বকেয়া পড়ে আছে বিপুল পরিমাণে৷ ফলত: এই পরিস্থিতিতে সরকার কী ভাবছে তা জানতে চায় গোটা দেশ, দাবি জানান তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন৷ তাঁর কথায়, ‘প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং সংসদে দাঁড়িয়ে একদিন এই প্রকল্পকে উপহাস করেছিলেন৷ পরবর্তীকালে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মনরেগার বাজেট বরাদ্দ কমানো হয়েছে৷ অথচ কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল দেশের গ্রামাঞ্চলের গরিব খেটে খাওয়া মানুষ আজও এই প্রকল্পের ওপরেই নির্ভরশীল৷’ এই প্রসঙ্গে রাজ্যসভার আরেক সাংসদ ড. শান্তনু সেন বলেন, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১০০ দিনের কাজে বকেয়া আদায়ে আন্দোলনে নেমেছে তৃণমূল। এই আবহে মোদি সরকার বাংলা সহ বিভিন্ন বিরোধী শাসিত রাজ্যের বকেয়া আটকে রেখে যে চরম অনৈতিক কাজ করছে তা গত ৯ বছরে বিজেপি সরকারের চরম উদাসিন্য এবং অকর্মণ্যতার নজির৷’