সৌরভ রায়, কুশমণ্ডি: উৎসবের হাওয়া বইতে শুরু করেছে মুখোশ গ্রামের খোলা মাঠের উপর দিয়ে। মুখোশের আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমণ্ডি ব্লকের মহিষবাথান। গ্রামের পশ্চিমে বয়ে চলেছে মরা শ্রীমতী নদী। নদীর পশ্চিমে উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের বরুণা পঞ্চায়েত। কালিয়াগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে বালুরঘাটের দিকে রওনা হয়ে ফতেপুর থেকে পশ্চিম কোণে যেতে হবে ৮ কিলোমিটার। আবার ইটাহার হয়ে প্রাচীন বিরাট রাজের ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে ১২ কিলোমিটার উত্তরে মহিষবাথান। ৪০ বছর আগেও এই মহিষবাথান আর সাধারণ দশটা গ্রামের মতনই ছিল। তবে কাঠের বিশালাকার মুখোশ পরে নাচ দেখাতেন। প্রয়াত কেকারু সরকার ও তাঁর হাতে তৈরি নৃত্যশিল্পীরা।
‘মুখোশ নাচের দল পাওয়া যায় মহিষবাথানে। ’ এই কথা কবে থেকে মুখে মুখে প্রচার হতে শুরু করেছিল, তা সঠিক করে বলতে পারলেন না বর্তমান প্রজন্মের গুণী মুখোশশিল্পী সুষেন সরকার। বর্ষার প্রাক পর্বে প্রকৃতি দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে রাজবংশী সম্প্রদায়ের মধ্যে নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম মুখোশপুজো। মন্দিরে অনেকেই মাটির কালী প্রতিমা তৈরি করে পুজো করলেও রাজবংশী সম্প্রদায়ের মধ্যে কাঠের তৈরি কালীর মুখোশ পুজোর প্রচলন দিনাজপুরের বহু জায়গায় এখনও দেখা জৈষ্ঠ মাসে। সেই কাঠের মুখোশ এখন মহিষবাথান গ্রামের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছে গ্লাসগো শহরেও।
কুশমণ্ডি ব্লকের দেউল পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মহিষবাথান গত পঞ্চায়েত ভোটে দখল করেছিল তৃণমূল। প্রধান হয়েছিলেন এখানকার বিনয় সরকার। তাঁর বক্তব্য, বহু কাজ হয়েছে গত পাঁচ বছরে। কিছু তারপরও তিনি হেরে গিয়েছেন। পঞ্চায়েত সদস্য হয়েছে বিজেপির। আগের প্রধান দুটো জলের ট্যাংক বসিয়েছিলেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই চুরি হয়ে গিয়েছে। তাই পানীয় জলের অসুবিধাটা থেকেই গিয়েছে। বিজেপির পঞ্চায়েত কণিকা দেবশর্মা জানিয়েছেন, উন্নয়ন করেননি তৃণমুলের প্রধান। তাই মহিষবাথানের মানুষ যোগ্য জবাব দিয়েছেন। পাড়ার ভেতরে রাস্তায় ঢালাই হয়নি। ড্রেনের সমস্যা আছেই। মহিষবাথানের মুখোশ ভারত সরকারের জিআই ট্যাগ পাওয়ার পরে বড় বড় ব্যবসায়ীরাও এখন ছুটে আসছে মহিষবাধানে।
এবছর সরকারের সহযোগিতায় রিলায়েন্স ছাড়াও একাধিক কোম্পানি কিনবে মুখোশ। সেই কাজে ব্যস্ত শিল্পী শংকর দাস, টুলু সরকাররা। শংকর জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসন অনলাইনে মুখোশ বিভিন্ন একটা ভালো সুযোগ করে দিয়েছে। একই কথা জানিয়েছেন হস্তশিল্পী টুলুও। তবে পকেটে টাকা থাকলেও শিল্পীরা এখনও নতুন জামা কেনার জন্য বাজারে যেতে পারেননি। এটা অবশ্য কোনও নতুন ঘটনা নয়। মহিষবাথান হস্তশিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি পরেশ সরকার বলেন, আমাদের গ্রামে দুর্গাপুজোর জামাকাপড় পুজোর দু’ একদিন আগেই কেনা হয়। রায়গঞ্জ বা মালদায় বাজার করতে কেউ যায় না। আগে বাজার ছিল পতিরাজ আর ধোনকোল। ইদানীং রায়গঞ্জ কালিয়াগঞ্জ বা ইটাহারে যান অনেকে। আবার কেউ কেউ বাজার সারেন কুশমণ্ডিতেই।
মহিষবাথান গ্রামে অবশ্য কোনও দুর্গাপুজো হয় না। পাশের কাঁঠালবাড়ি ও ঊষাহরণ গ্রামের পুজোই ভরসা। দল বেঁধে পুজোমণ্ডপে যাওয়াটা ছিল একটা রীতি। সেই রীতি খানিকটা পরিবর্তন হয়েছে গত ৩ বছরে। এখন পাড়ায় পাড়ায় টোটো। মহিষবাথান, খাগাইল, ঊষাহরণ গ্রামের শতাধিক টোটো পুজোর ঘোরার জন্য বুক হয়ে গিয়েছে এখন থেকেই। আর স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের সবচেয়ে বড় সাথী সাইকেল। মহিষবাথান হাসপাড়ার নবম শ্রেণির মালতী সরকার বলল, ‘ঠাকুর দেখতে দল বেঁধে বেরোনো মানে দুপুরে। সন্ধ্যার আগে অবশ্যই ফিরে আসতে হবে বাড়ি।’
তবে একটু আঁধার রয়ে গিয়েছে এখনও। এই সময় পাট অন্যতম ফসল। গত দুই সপ্তাহ ধরে হাটে পাট বিক্রি করতে পারেননি অনেকেই। মহিষবাথানের দুই ধারে দুটো বড় হাট, ঝাঁপরাগাছি ও ঊষাহরণ। হঠাৎ করে পাটের দাম কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা পাট কেনা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে পাট বিক্রি করেই তাঁরা বাজারমুখী হবেন। এভাবেই ধীর লয়ে দুর্গাপুজোর আবহে জেগে উঠছে মহিষবাথান।
শিলিগুড়িঃ বাজলো ছুটির ঘণ্টা, আগাম বেজেছে এবার প্রচণ্ড গরমে। স্কুল ছুটি, তার মধ্যে দাবদাহ। এমন…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ইজরায়েল-হামাস (Israel-Hamas) সংঘর্ষ অব্যাহত। জানা গিয়েছে, গাজার সীমান্ত লক্ষ্য করে ইজরায়েলের…
শামুকতলা: প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা সকলের। রোদের তাপে অন্য প্রাণীদের মতো পাখিরাও কাহিল। জলাশয় বা…
সাগর বাগচী, শিলিগুড়ি: ছোট্ট ঘরটিতে প্রবেশ করতে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য থমকে যেতে হয়। হাতের ডানদিকে,…
শিলিগুড়িঃ সোমবার সকাল থেকে ৭২ ঘণ্টার জন্য বন্ধ হয়ে গেল কালিম্পং-সিকিমগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক।…
মালদা: রাত পোহালেই মালদায় (Lok Sabha Election Phase 3) ভোট। সোমবার সকাল থেকে প্রবল গরমকে…
This website uses cookies.