তুষার দেব, দেওয়ানহাট: একটা সময় পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষে কাউন চাষের ব্যাপক প্রচলন ছিল। গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে দানাশস্য হিসাবে কদর ছিল কাউনের। কিন্তু তা এখন অতীত। আর হারিয়ে যেতে বসা এই কাউন চাষ ফেরাতে সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি দপ্তর (Agriculture Department)। আর এর অঙ্গ হিসাবে জেলায় বিনা কর্ষণে কাউন চাষ শুরু হয়েছে। গোটা রাজ্যে যা প্রথম। কোচবিহার-১ ব্লক সহ কৃষি অধিকর্তা জাহাঙ্গির আলমের কথায়, ‘জেলায় দীর্ঘদিন ধরে বিনা কর্ষণে গম, ভুট্টা, সর্ষে, পাট ইত্যাদি চাষে সাফল্য এসেছে। এখন এই পদ্ধতিতে কাউন চাষেও কৃষকরা লাভবান হবেন।’
কোচবিহার জেলায় এবার প্রায় ১ হাজার বিঘা জমিতে কাউনের চাষ শুরু হয়েছে। তারমধ্যে প্রায় দুশো বিঘা জমিতে তা হচ্ছে বিনা কর্ষণে। জেলায় কাউন চাষ সফল করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে সাতমাইল সতীশ ফার্মার্স প্রোডিউসার প্রোমোটিং সংস্থা। যার সম্পাদক অমল রায়ের বক্তব্য অনুযায়ী, মিলেট (Millet) চাষ এবং মিলেটের তৈরি বিভিন্ন পদ নিয়ে সম্প্রতি তাঁরা একটি মিলেট উৎসব আয়োজন করেছিলেন। এছাড়া রাসমেলাতেও কৃষি দপ্তরের উদ্যোগে মিলেট বিষয়ক একটি প্রশিক্ষণ শিবির এবং আলোচনাচক্র অনুষ্ঠিত হয়। এসবের ফলশ্রুতিতে ক্রমেই জেলার কৃষকদের (Farmers) মধ্যে কাউন চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
কাউন প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম, আয়রন সহ বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর। বহু ডায়াবিটিস, কিডনির রোগী এই কাউন খেয়ে সুস্থ আছেন বলে জানা যায়। কোচবিহার-১ ব্লকের ঘুঘুমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের হাওয়ারগাড়ি গ্রামের আজগার আলি এবছর প্রায় দশ বিঘা জমিতে বিনা কর্ষণে কাউন চাষ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘আমি প্রতি বছরই অল্প জমিতে কাউন চাষ করি। এবার কৃষি দপ্তর ও সাতমাইল সতীশ ফার্মার্স প্রোডিউসার প্রোমোটিং সংস্থার উৎসাহে প্রথাগত চাষের পদ্ধতি বদলে ফেলেছি। তাতে লাভের পরিমাণ বাড়বে বলে আমি আশাবাদী।’
কোচবিহার জেলা সহ কৃষি অধিকর্তা রজত চট্টোপাধ্যায়ও কাউন চাষ নিয়ে জেলার চাষিদের আগ্রহ বৃদ্ধিতে দারুণ খুশি। তাঁর কথায়, ‘আমরা সর্বতোভাবে চাষিদের সাহায্য করছি। বিভিন্ন আধুনিক পদ্ধতির সুবিধাও তাঁরা পাচ্ছেন। সবমিলিয়ে কাউন চাষের সুদিন ফের ফিরবে।’