জলপাইগুড়ি: তিস্তায় বন্যা নিয়ন্ত্রণে ১১ কোটি টাকার প্রকল্প পাঠানো হলেও এখনও অনুমোদন করেনি ব্রহ্মপুত্র বোর্ড। এদিকে বর্ষা ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে। তথাপি অনুমোদনের কোনও আশার আলো দেখছে না রাজ্য সেচ দপ্তর। এই অবস্থায় এরই মধ্যে সেচ দপ্তরের তরফে কালিম্পং পাহাড়ের নীচু এলাকা থেকে সেবক হয়ে ওদলাবাড়ি দিয়ে ক্রান্তি, রাজগঞ্জ, ময়নাগুড়ি ও জলপাইগুড়ি সদর ব্লক ছাড়াও মেখলিগঞ্জ পর্যন্ত প্রবাহিত তিস্তা নদীর উপর দীর্ঘমেয়াদি বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প রিপোর্ট বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দিয়েই তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ সংস্থা যে বিষয়গুলি ফিল্ডে গিয়ে সরেজমিনে দেখবে সেগুলি হল, পাহাড় থেকে সমতল পর্যন্ত তিস্তা নদী দিয়ে কী পরিমাণ নুড়ি, বালি, পাথর নীচু এলাকা দিয়ে নেমে নদীতে এসে জমা হয়, তিস্তার নদীগর্ভ কতটা ভরাট হচ্ছে, অগভীর হয়ে পড়ছে কোন কোন জায়গা, আবার তিস্তা নিজেই নিজের নদীবক্ষে নতুন চ্যানেল করেছে কীভাবে এবং তার প্রভাব পড়ছে কীভাবে, তিস্তা নদীতে বাঁধের ও পাড়ের ধারে ভূমিক্ষয় কতখানি হয়েছে, বর্ষার সময় এবং বর্ষার পর শুখা মরশুমে তিস্তার সার্বিক পরিস্থিতিই বা কী থাকে। এই বর্ষার সময় এবং বর্ষার পরে দুই ধাপে পাহাড় থেকে তিস্তার উপর সার্বিক অবস্থা খতিয়ে দেখেই দীর্ঘমেয়াদি বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করা হবে। সেচ দপ্তরের উত্তর-পূর্ব বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, ‘তিস্তায় নিয়ন্ত্রণের ১১ কোটি টাকার প্রকল্প গত এক বছর ধরে ব্রহ্মপুত্র নদী বোর্ডের কাছে ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। কিন্তু বর্ষার আগে প্রকল্পটির অনুমোদন পেলে অনেক সুবিধা হত।’
সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনের আগে জলপাইগুড়ির সাংসদ ডাঃ জয়ন্ত রায়ের অনুরোধে ব্রহ্মপুত্র নদী বোর্ডের কয়েকজন পদাধিকারী জলপাইগুড়ি এসেছিলেন। সিকিমের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর তিস্তার সমতলের অবস্থা তাঁরা সরেজমিনে দেখে গিয়েছেন। এমনকি পশ্চিমবঙ্গ থেকে পরিকল্পনা পাঠালে তাঁরা অবশ্যই বিবেচনা করবেন গুরুত্ব দিয়ে বলে বোর্ডের পদাধিকারীরা তখন জানিয়ে যান। কিন্তু বোর্ডের অফিসে পড়ে থাকা ১১ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন এক বছর ধরে ঝুলে রয়েছে। যদিও সাংসদ বলেন, ‘এখন নির্বাচনি বিধি কার্যকর আছে। ৪ তারিখের পর ব্রহ্মপুত্র নদী বোর্ডের বিষয়টি দেখা হবে।’
এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদী বোর্ডে পশ্চিমবঙ্গকে শুধুই আমন্ত্রিত সদস্য করে রাখা হয়েছে বলে খবর। কোনও অনুমোদন বা বরাদ্দ আজ পর্যন্ত দেয়নি বোর্ড। নির্বাচনের আগে রাজ্য সেচ দপ্তর থেকে বোর্ডকে চাপ দেওয়া হয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা রূপায়ণে সহযোগিতা করার জন্য। সেই কারণে নতুন করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তিস্তা নদীর উপর তৈরি করে ব্রহ্মপুত্র নদী বোর্ডের কাছে বর্ষার পর পাঠানো হবে বলে চিফ ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন।