দেবদর্শন চন্দ, কোচবিহার: একাধিক সমস্যায় ধুঁকছে কোচবিহার শহরের চার গুরুত্বপূর্ণ কলেজ। কিছু কলেজে স্থায়ী অধ্যাপক না থাকায় স্যাক্ট (SACT) শিক্ষকরাই ক্লাস করাচ্ছেন। অধিকাংশ কলেজেই পর্যাপ্ত শিক্ষাকর্মীর (Educational Worker) অভাব রয়েছে। এছাড়া রয়েছে পরিকাঠামোগত (Infrastructure) সমস্যাও। কোথাও কোথাও আবার গ্রন্থাগারে (Library) পর্যাপ্ত বইয়ের অভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পড়ুয়াদের। এদিকে, নয়া শিক্ষানীতি অনুযায়ী স্নাতক স্তরে চার বছরের ডিগ্রি কোর্স শুরু হয়েছে। সেখানে কলেজগুলির এই পরিস্থিতিতে চিন্তায় অধ্যাপক, অধ্যক্ষরাও। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবকেই দায়ী করছেন অধ্যাপক থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রী এমনকি অভিভাবকেরাও।
জেলার ঐতিহ্যবাহী কলেজ হিসেবে পরিচিত আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল মহাবিদ্যালয়। এই কলেজে পরিকাঠামোগত কোনও সমস্যা না থাকলেও অধ্যাপক এবং শিক্ষাকর্মীর কিছু পদ শূন্য রয়েছে। সম্প্রতি শিক্ষাকর্মীদের কয়েকজন অবসর নেওয়ায় এবং নতুন নিয়োগ না হওয়ায় এই সমস্যা বেড়েছে। কলেজের হস্টেলেও দীর্ঘদিন নৈশপ্রহরী নেই। বিষয়টি নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ নিলয় রায় বলেন, ‘সমস্যা হলে আমরা সরকারকে জানাই। তারা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়।’
এদিকে, কোচবিহার মহাবিদ্যালয়েও পর্যাপ্ত শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর অভাব রয়েছে। এই কলেজটিতেও পরিকাঠামোগত একাধিক সমস্যা রয়েছে। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, কলেজটিতে শিক্ষাকর্মীর জন্য মোট ১৮টি পদ থাকলেও বর্তমানে ৬ জন স্থায়ী কর্মী এবং কয়েকজন অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন। কয়েকমাসের মধ্যে দুজন কর্মী অবসর নেবেন। তখন সমস্যা আরও বাড়বে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
কলেজে লাইব্রেরিকে আরও উন্নত করা, বইয়ের সংখ্যা বাড়ানো, বড় অডিটোরিয়াম তৈরি সহ একাধিক দাবিও রয়েছে। এছাড়াও কলেজের মাঠটি সংস্কার করার দাবিও তুলেছেন অধ্যাপকরা। সম্প্রতি কলেজটি নতুন ভবন পেলেও প্রয়োজনীয় আসবাবের অভাব রয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ পঙ্কজকুমার দেবনাথ বলেন, ‘কলেজে পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। আমাদের বসার জন্য বড় অডিটোরিয়াম প্রয়োজন। এছাড়াও লাইব্রেরি বিল্ডিং প্রয়োজন। এছাড়া শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর কিছুটা অভাব রয়েছে।’
একই অবস্থা ঠাকুর পঞ্চানন মহিলা মহাবিদ্যালয়েও। সেখানেও রয়েছে পরিকাঠামোগত নানা সমস্যা। এই কলেজে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের অভাবের পাশাপাশি শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর অভাব রয়েছে। সংস্কৃত, এডুকেশন, সোশিওলজি বিভাগের স্থায়ী (Permanent) কোনও শিক্ষক নেই বলে কলেজ সূত্রে খবর। স্যাক্ট শিক্ষক দিয়েই সেই বিভাগগুলিতে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। কলেজে নেই সেমিনার হল এবং অডিটোরিয়ামও। পর্যাপ্ত প্রোজেক্টর এবং কম্পিউটারের অভাব থাকায় সমস্যা বাড়ছে কলেজে। এদিকে, কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ রুপা ভৌমিক বলেন, ‘শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম। এছাড়াও কলেজে পরিকাঠামোগত নানা সমস্যা রয়েছে।’
অন্যদিকে, গুঞ্জবাড়ি মোড়ে থাকা ইউনিভার্সিটি বিটি অ্যান্ড ইভনিং কলেজটি একমাত্র উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন। ঠাকুর পঞ্চানন মহিলা মহাবিদ্যালয়ের মতো এই কলেজটিতেও পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের (Classroom) অভাব রয়েছে। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, কলেজটিতে ৩৫০০-র কাছাকাছি পড়ুয়া থাকলেও সেই অনুপাতে ক্লাসরুমের অভাব রয়েছে। রয়েছে অশিক্ষক কর্মীর অভাবও। গ্রন্থাগারে প্রয়োজনের তুলনায় বইয়ের অভাব রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডঃ রফিক উজ্জামান বলেন, ‘কলেজে পরিকাঠামোগত সমস্যা সহ অন্য কিছুক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।’ শহরের এই কলেজগুলির সমস্যার সমাধান কতদিনে হয়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।