শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গের বন ও বন্যপ্রাণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হস্তীবিশারদ পার্বতী বড়ুয়া পদ্মশ্রী পাচ্ছেন অসম থেকে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাসের অন্ত নেই এখানকার পরিবেশপ্রেমীদের। দিল্লি থেকে রাতেই ফোনে সুখবর পেয়ে আপ্লুত পার্বতী উত্তরবঙ্গ সংবাদকে বলছেন, ‘এর আগে অসম গৌরব পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু জাতীয় স্তরে এই স্বীকৃতি আমার কাজের উৎসাহ আরও বাড়িয়ে দিল।’
পশ্চিমবঙ্গের ঝুলিতে অবশ্য এসেছে চারটি পদ্ম সম্মান। ২০২৪ সালের পদ্মশ্রীর জন্য মনোনীত হয়েছেন পুরুলিয়ার ‘গাছ দাদু’ দুখু মাঝি, ভাদুশিল্পী রতন কাহার, বিশিষ্ট মৃৎশিল্পী সনাতন রুদ্র পাল ও ছৌ মুখোশশিল্পী নেপালচন্দ্র সূত্রধর।
অসমের বাসিন্দা হলেও পার্বতীর জীবনের অনেকটাই কেটেছে উত্তরের জঙ্গলে। এশিয়ার প্রথম মহিলা মাহুত হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। বাবা লালজি বড়ুয়া ছিলেন বিশিষ্ট হস্তীবিশারদ। তাঁর হাত ধরে পার্বতীও ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছেন হস্তীবিশারদ। গৌরীপুরের রাজপরিবারের সন্তান পার্বতী সব ছেড়ে বেছে নিয়েছিলেন সাধারণ জীবন। সেখান থেকেই তাঁর এমন উত্তরণ। পার্বতীর কথায়, ‘বাবা আমার আসল গুরু। তাঁর সঙ্গে থেকেই যা কিছু শিখেছি।’
বাংলার যে চারজন মনোনীত হয়েছেন, তার মধ্যে দুখু মাঝিও পরিবেশের জন্য কাজ করে চলেছেন নিরন্তর। টাকার অভাবে পড়াশোনা থমকে যাওয়া বছর বারোর ছেলেটা সেই থেকে গাছ লাগিয়েই চলেছেন। তাঁর হাতে প্রাণ পেয়েছে অন্তত ৫০০০ গাছ। পুরুলিয়ার সিন্দ্রি গ্রামের দুখু এখনও যেখানেই যান, গাছ লাগিয়ে বেড়ান এবং মানুষকে উৎসাহ দেন প্রতিনিয়ত।
‘বড়ো লোকের বিটি লো’ গানের জন্য একসময় বেশ পরিচিতি পেয়েছিলেন বীরভূমের রতন কাহার। সেই রতনকেই এবার পদ্মশ্রী সম্মানের জন্য বেছে নিয়েছে কেন্দ্র। টুসু, ঝুমুর, আলকাপ গানের জন্য তাঁর জনপ্রিয়তার অন্ত নেই।
বাংলার দুর্গা প্রতিমা ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেয়েছে আগেই। সেই প্রতিমার স্রষ্টা কলকাতার বিশিষ্ট স্কাল্পচার শিল্পী সনাতন রুদ্র পালও এবার পদ্মশ্রী সম্মান পেতে চলেছেন। সাবেকি দুর্গা প্রতিমা তৈরিতে তিনি ‘অনন্য’।
পুরুলিয়ার বিখ্যাত ছৌ নাচকে ধরে রেখেছেন অন্যতম মুখোশশিল্পী নেপালচন্দ্র সূত্রধর। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭০টি ছৌ দলকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই মঞ্চে জীবন্ত হয়ে ওঠে ‘ছৌ’। সেই নেপালের কীর্তিও এবার কেন্দ্রীয় সরকারের নজরে। সবমিলিয়ে এবার পদ্ম সম্মান প্রাপ্তিতে জয়জয়কার পরিবেশপ্রেমী ও শিল্পীদের।