রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (North Bengal Medical) থেকে রোগীকে ফুসলিয়ে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কিছুতেই কমছে না। অভিযোগ, শুধু অন্তর্বিভাগ নয়, বহির্বিভাগ থেকেও রোগীকে নার্সিংহোমে গিয়ে অপারেশন করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন খোদ চিকিৎসক। তা সে সিনিয়ার হন বা জুনিয়ার, চিকিৎসকদের একাংশ এখন দালাল (Fraud) মারফত এই কারবার ফেঁদে বসেছেন। আর এই কাজের জন্য মেডিকেলে দালাল পুষছে কাওয়াখালি থেকে মেডিকেল মোড় পর্যন্ত গজিয়ে ওঠা নার্সিংহোমগুলি। হাসপাতাল সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিকের বক্তব্য, ‘দালালচক্র রুখতে সর্বদা চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশও প্রতিদিন নজরদারি করে।’
শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল (Siliguri Hospital) এবং উত্তরবঙ্গ মেডিকেল থেকে রোগীকে ফুসলিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল অথবা নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর প্রবণতা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। এই কাজের বেশিরভাগটাই দালাল মারফত হয়। মেডিকেলের চারপাশে অন্তত ১০টি ছোট-বড় নার্সিংহোম গজিয়ে উঠেছে। এই নার্সিংহোমগুলির ৯০ শতাংশ রোগীই শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল অথবা মেডিকেল থেকে নিয়ে যাওয়া। অভিযোগ রয়েছে, কিছু চিকিৎসকের থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতেই বহির্বিভাগের পাশাপাশি অন্তর্বিভাগে চিকিৎসাধীন রোগীদের কাছে পৌঁছে যায় দালালরা। মেডিকেল থেকে রোগীকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবারের লোকজনের মগজধোলাই করা হয়।
চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, মেডিকেলে অনেক সময় অপারেশনের তারিখ অনেক পরে দেওয়া হয়। সেই সুযোগেই ওই রোগীকে এবং তাঁর পরিবারকে দালালরা গিয়ে বোঝায়, আপনার রোগীর দ্রুত অপারেশন হওয়ার দরকার। কিন্তু এখানে অপারেশনের আশায় অপেক্ষা করতে করতে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। নার্সিংহোমে চলুন, এখানকার ডাক্তারই নার্সিংহোমে আপনার অপারেশন করে দেবেন। পরিজনকে বাঁচাতে দালালদের খপ্পরে পড়ছেন অনেকেই।
এই ধরনের ঘটনা বিশেষ করে অর্থোপেডিক, জেনারেল সার্জারি, পেডিয়াট্রিক, নিউরোসার্জারিতেই বেশি। এবার এর সঙ্গে নেফ্রোলজি বিভাগও যুক্ত হয়েছে। অভিযোগ, এই বিভাগে একজন চিকিৎসককে চুক্তির ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। ওই চিকিৎসক মেডিকেলের ১০০ মিটারের মধ্যে থাকা একটি নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত। তিনি মেডিকেলের নেফ্রোলজি বহির্বিভাগে অন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে বসেন। সেখান থেকেই রোগীকে সরাসরি নার্সিংহোমে নিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই কাজেই দালালরা বেশি সক্রিয়। কেননা মেডিকেলে নেফ্রোলজির অন্তর্বিভাগ নেই। ফলে বহির্বিভাগ থেকেই রোগীকে সরাসরি নার্সিংহোমে নেওয়ার সুবিধা রয়েছে।
এই ঘটনায় মেডিকেলের চিকিৎসদের মধ্যেও হইচই পড়েছে। চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, দ্রুত এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হওয়া দরকার। অনেকে আবার মনে করছেন, এত বড় মেডিকেল কলেজে এত বছরেও নেফ্রোলজির অন্তর্বিভাগ তৈরি হল না কেন, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।