সানি সরকার, শিলিগুড়ি: জায়গা ছাড়তে হওয়ায় অনেকে রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি। অনেকে আবার ভিড় ঠেলে শৌচাগারে যেতে না পেরে পেট চেপে বসে ছিলেন। প্রতিবাদ করে কেউ কেউ আবার তর্কে জড়িয়েছেন। এই ঘটনা কোনও লোকাল ট্রেনের নয়। এখন এমন ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে দার্জিলিং মেল থেকে পদাতিক এক্সপ্রেসের মতো দূরপাল্লার ট্রেনগুলিতে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে স্লিপার থেকে এসি কোচে বিনা টিকিটের যাত্রীদের এমন ‘অত্যাচার’ চললেও রেলের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
মারাত্মক অভিযোগ, পুলিশের প্রশ্রয়েই নাকি সংরক্ষিত কামরায় জায়গা পাচ্ছেন বিনা টিকিটের যাত্রীরা। তবে, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলছেন, ‘যথেষ্ট যাত্রী ভিড় রয়েছে। কিন্তু সংরক্ষিত কোচের ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে না। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে কথা বলব।’ পূর্ব রেলের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘যাত্রীদের কাছে অনুরোধ এমন ঘটনা ঘটলে তাঁরা যেন রেলমদত অ্যাপে অভিযোগ জানান।’
সংরক্ষিত কামরার টিকিট ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট কোচের দরজা বন্ধ থাকায় তিনি তাতে উঠতে পারেননি। যেতে পারেননি পাশের সংরক্ষিত কোচেও। পদাতিক এক্সপ্রেসের জেনারেল কামরায় তিনি উঠতে পারেন আরপিএফের জওয়ান সহায়তা করায়। নিউ জলপাইগুড়ি জংশনে (এনজেপিতে) নেমে ঘটনার বিবরণ দিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিলেন বর্ধমানের বাসিন্দা সুকমল রায়। তিনি বলছেন, ‘বারবার দরজায় ধাক্কা দেওয়ার পরও খোলা হয়নি। বিষয়টি আরপিএফের নজরে আনা হলে জওয়ানরাও ধাক্কা দেন। কিন্তু বন্ধই থাকে দরজা। ট্রেন প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল, এমন পরিস্থিতিতে এক জওয়ান আমাকে জেনারেল কোচে তুলে দেন। তা না হলে রাত ২টা থেকে সারারাত বর্ধমান স্টেশনে বসে থাকতে হত।’ নির্দিষ্ট স্টপে ট্রেন দাঁড়ানোর পর কেন দরজা খোলা রাখার ক্ষেত্রে রেলের নজর থাকবে না, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। দার্জিলিং মেল, পদাতিক এক্সপ্রেস সহ কলকাতা-উত্তরবঙ্গের মধ্যে চলাচলকারী ট্রেনগুলির যাত্রীদের অভিজ্ঞতা বলছে, বিনা টিকিটের যাত্রীদের ‘দাদাগিরি’ দিন-দিন বাড়ছে।
রবিবার দার্জিলিং মেলে এনজেপিতে নেমে দক্ষিণ কলকাতার হরিদেবপুরের বাসিন্দা চৈতালি কর্মকার বললেন, ‘ট্রেনে ওঠার পর দেখলাম আমার সিটে দুজন বসে রয়েছে। সিট খালি করার কথা বলতেই তাঁরা পাশে বসার অনুরোধ করেন। আপত্তি করতেই জানিয়ে দেন, পুলিশকে টাকা দিয়ে কামরায় উঠেছেন। কিছু করার থাকলে করে নিতে। একজন মহিলা হয়ে কী আর করতে পারি। সারারাত জেগে কাটিয়ে দিলাম।’
উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের এসি থ্রি-টিয়ার বি-ওয়ান কোচের এক মহিলা যাত্রী বললেন, ‘চোখের সামনে দেখলাম টিকিট পরীক্ষক বিনা টিকিটের বা অন্য কোচের টিকিটের যাত্রীদের বসাচ্ছেন। লেনদেন ছাড়া এমনটা হতে পারে না।’
অধিকাংশ যাত্রীর বক্তব্য, সংরক্ষিত কামরায় বিনা টিকিটের যাত্রীদের ভিড়টা এত বেশি যে ট্রেনের মধ্যে প্রয়োজনে চলাফেরা করা দায় হয়ে পড়েছে। বাথরুমের সামনে এত মানুষ শুয়ে-বসে থাকে যে বাথরুমে যাওয়া পর্যন্ত কষ্টকর বলে অভিযোগ অনেকেরই। পদাতিক এক্সপ্রেসের যাত্রী দমদমের কার্তিক ঘোষের কথায়, ‘বিনা টিকেটের যাত্রীদের যা মেজাজ, তাতে তো মনে হচ্ছে এখন টিকিট কেটে ট্রেনে ওঠা অন্যায়।’
বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন রেলকর্তারা। কিন্তু তা কবে বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়েই যাত্রীদের বড় অংশের মধ্যে রয়েছে প্রশ্ন।