অভিজিৎ ঘোষ, সোনাপুর: ঘড়িতে দুপুর সাড়ে বারোটা। কুমারপাড়া গ্রামে তখন বুথের কর্মী সমর্থক নিয়ে প্রচারে বেড়িয়েছেন আলিপুরদুয়ার-১ পঞ্চায়েত সমিতির ১০ নম্বর আসনের তৃণমূলের প্রার্থী সুভাষ রায়। অন্যদিকে ওই আসনের বিজেপি প্রার্থী পরিতোষ রায় কর্মীদের নিয়ে প্রচারে ছিলেন উত্তর সোনাপুর গ্রামে। দু ’জন আলাদা প্রতীক নিয়ে ভোটে দাঁড়ালেও দু’জনের প্রচারে একটি জিনিসের মিল, প্রার্থীদের পিছনে প্রচুর কর্মী ও সমর্থক ছিল। দুই জমজমাট প্রচারের উল্টো ছবি নজরে আসল খয়েরবাড়ি বাজারের কাছে সোনাপুর বিকে হাই স্কুলের রাস্তায়। রাস্তার পাশে একটি বাঁশে পতাকা লাগাচ্ছিলেন নলিনী রঞ্জন রায়। উত্তর সোনাপুরের বছর আটান্নর ওই প্রবীণ সুভাষ ও পরিতোষের প্রতিদ্বন্ধী। ১০ নং আসনে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী নলিনী রঞ্জন। তবে শুধু ব্লকেই নয় জেলায় এক মাত্র ওই প্রার্থীই সিংহ চিহ্ন নিয়ে ভোটে লড়ছেন। পঞ্চায়েত সমিতির আর কোনও আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি ফরওয়ার্ড ব্লক। আর একমাত্র প্রার্থীও বড় একা এবং সঙ্গীহীন। একাই পাতাকা লাগাচ্ছেন বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে, আবার প্রচারও সারছেন একাই। রাস্তার দু’দিকে যখন নলিনী পতাকা লাগাতে ব্যস্ত তখন রাস্তার আরেক পাশে দাঁর করানো তার সাইকেলে দেখা গেলো একটা ব্যাগ। সেখানে কয়েকটা বাঁশের কঞ্চি, দলের পতাকা আর লিফলেট চোখে পড়ল।
ভোটের কয়েকদিন ওই সাইকেল আর ব্যাগই সঙ্গী নলিনীর। কথা বলতে গিয়ে জানালেন, দলে নতুন কর্মী নেই। পুরনো কর্মীরা বেশিরভাগই বয়সের জন্য বাড়ি থেকে বের হন না। কাজেই ভোটে যখন দাড়িয়েছেন, তখন বাধ্য হয়ে একাই প্রচারে নেমেছেন। বাঁশ কেটে পতাকা লাগানোর বাতা বানানো থেকে শুরু করে পোস্টার লাগানো সব একা হাতে সামলাতে হচ্ছে। নলিনীর কথায়,’ ‘৮ টি বুথে আমাকে ঘুরতে হচ্ছে। পায়ে সমস্যা থাকায় বেশিক্ষণ সাইকেল চালাতে পারি না। তবুও কিছু পরিচিতদের কাছে যাচ্ছি। দলের যে পুরনো সমর্থকরা রয়েছে তারা তো ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।’
কথা শেষ করে সাইকেলে উঠতে যাওয়ার আগেই রাস্তায় আরেকজন পরিচিতকে দেখে পকেটে থেকে একটি স্যাম্পল ব্যালট বের করে দেখিয়ে ওখানে ভোট দিতে অনুরোধ করতে দেখা গেলো ওনাকে। তবে আরেকটু উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ফরোয়ার্ড ব্লক ওই আসনে প্রার্থী দিয়েছে আবার বামফ্রন্টের আরেক শরিক দল আরএসপিও ওই আসনে প্রার্থী দিয়েছে। যা নিয়ে বামফ্রন্টের মধ্যেই হইচই শুরু হয়েছে। বামফ্রন্টের নেতারা বলছেন, ওই আসনে আরএসপি থেকেই বরাবর প্রার্থী দিয়ে আসা হয়েছে। এবিষয়ে আরএসপির জেলা সম্পাদক সুব্রত রায় বলেন,’ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে আগে ওই আসনে লড়ার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। হুট করে নমিনেশন দেওয়া হয়। এটা ঠিক হয়নি। মানুষের কাছে ভুল বার্তা গেলো। জোটের দুই প্রার্থী এক আসনে।’