রতুয়া: রতুয়ার মহানন্দাটোলার কান্তটোলা গ্রামে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্যে তোপ দাগলেন উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। তাঁর দাবি, ভাঙন রোধে রাজ্যের তরফে কেন্দ্রকে কোনও পরিকল্পনা পাঠানো হয়নি। একাধিকবার এই ব্যাপারে রাজ্যের সেচ দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি প্রভাত কুমার মিশ্রকে ফোন করা হলে তিনি কোনও তথ্য দিতে পারেননি। তাঁর আরও দাবি, রাজ্য সরকার ভাঙন নিয়ে শুধুই রাজনীতি করছে, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। যদিও এই প্রসঙ্গে রতুয়ার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার বাংলা, বিহার ও ঝাড়খন্ডের মতো অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে বঞ্চনা করছে।
রতুয়া ১ এর মহানন্দাটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের কান্তটোলা গ্রামে গঙ্গা ভাঙন অব্যাহত। আগ্রাসী গঙ্গা ভাঙনের তাণ্ডবে আতঙ্কিত হয়ে কান্তটোলা গ্রামের প্রায় দেড়শো পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। কিছু বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে গঙ্গা গর্ভে। কয়েকদিন আগেই গ্রামে গিয়ে মানুষের জনরোষের মুখে পড়েন এলাকার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা বর্মন ঘোষ, মালতিপুরের বিধায়ক আব্দুর রহিম বকসি সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এদিন সেখানে যান উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। তাঁকে দেখে ভিড় করেন দুর্গতরা। প্রত্যেকেই সাংসদের কাছে দাবি করেন গঙ্গা বেঁধে দিতে হবে, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করে দিতে হবে।
কান্তটোলা গ্রামের বাসিন্দা বলরাম মণ্ডল জানান, বিগত কয়েকদিনে প্রায় কুড়িটি বাড়ি গঙ্গা গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। সাংসদকে বলা হয়েছে, পাথর দিয়ে নদী বাঁধার ব্যবস্থা করতে। পাশাপাশি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে। কয়েকদিন আগে কান্তটোলা গ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে এলাকার সাংসদ খগেন মুর্মুর বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়। গ্রামের মানুষদের তিনি বলেছিলেন, গ্রামে সাংসদ এলে গঙ্গার জলে ছুড়ে ফেলে দেবেন। ভাঙন রোধের জন্য রাজ্যের তরফে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হলেও কেন্দ্রীয় সরকার কোনও কাজ করছে না। মানুষের কাছে তিনি ভোট নিয়ে চলে গিয়েছেন।
এদিন এলাকায় এসে সাংসদ জানিয়েছেন, প্রায় ২০-৩০ বাড়ি গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে। এই মানুষদের পুনর্বাসন দেওয়া রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। এই গ্রামগুলো রাজ্য সরকারের অধীনেই পড়ে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যের তরফে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়নি। ভাঙন প্রতিরোধের জন্য কেন্দ্রের অর্থ সাহায্য প্রয়োজন সেটাও তারা জানায়নি। মালদার ভাঙন নিয়ে বারংবার সংসদে জানানো হয়েছে। রাজ্যের তরফে কোনও আবেদন না যাওয়ায় কেন্দ্র ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করতে পারছে না। কয়েকদিন আগে বিষয়টি নিয়ে সমরবাবুর সঙ্গে কথা হয়। প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি কাছে কেন্দ্রকে পাঠানো রাজ্যের আবেদনের চিঠির কপি বারবার চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনও তথ্য দিতে পারছেন না। আসলে গঙ্গার ভাঙন নিয়ে রাজ্য সরকার শুধু রাজনীতি করতে চাইছে।
যদিও পালটা সমর মুখোপাধ্যায়ের দাবি, সাংসদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। উনি রাজনীতি করছেন। কেন্দ্রের উদাসীনতার কারনে ভাঙন সমস্যায়র সমাধান হচ্ছে না। যখন ফরাক্কা ব্যারেজ হয় তখন কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে চুক্তি ছিল আপ স্টিমে ৬০ কিলোমিটার, ডাউন স্টিমে ১০ কিলোমিটার কেন্দ্রীয় সরকার দেখবে। বাংলা, বিহার, ঝাড়খন্ড অবিজেপি শাসিত রাজ্য থাকার ফলে এই তিন রাজ্যকে ভাঙনের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বিহারের মনিহারি থেকে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ৭০ কিলোমিটার কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কেন্দ্রকে বারবার চিঠি দিয়েও কেন্দ্র ভাঙন প্রতিরোধের জন্য টাকা বরাদ্দ করছে না। আগামীদিনে দলের বিধায়ক এবং মন্ত্রীদের নিয়ে ফরাক্কা ব্রিজ ঘেরাও করা হবে।