গাজোল: ‘ভাই তুই আগে নেমে যা, পরে নামব আমি। এরপর দুই ভাই মিলে একসঙ্গে ভাত খাব।’ ভাই তৈমুরকে একথা বলেছিলেন দাদা আলম শেখ। দাদার কথামতো তৈমুর নামতে শুরু করেছিলেন টাওয়ার থেকে। কিন্তু কি মনে হওয়ায় আবার উঠতে শুরু করেন। এরপরেই ঘটে অঘটন। যন্ত্রাংশ ভেঙে সেফটি বেল্ট ছিঁড়ে প্রায় ৪২ মিটার ওপর থেকে নীচে পড়ে যান তৈমুর। হাসপাতালে পৌঁছোনোর আগেই দাদার কোলে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গতকাল ময়নাতদন্তের পর এদিন দেহ নিয়ে আসা হয় গ্রামে।
গাজোলের বৈরগাছি-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পাঠানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তৈমুর শেখ (২২)। সংসার চালানোর তাগিদে দাদার সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের বেটা চৌকি এলাকায় কাজে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেখানে টাওয়ার থেকে তার খোলার কাজ করছিলেন। সেখানেই রবিবার টাওয়ার থেকে পড়ে মৃত্যু হয় তৈমুরের।
তৈমুরের দাদা আলম শেখ জানান, ৭ নভেম্বর রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা। ৯ নভেম্বর লখনউ পৌঁছে কাজে যোগ দেন। রবিবার দুই ভাই একসঙ্গে টাওয়ার থেকে তার খোলার কাজ করছিলেন। ভাই তৈমুরকে তিনি আগে নেমে যেতে বলেন। কিছুটা নেমে আবার উপরে উঠতে শুরু করেছিলেন তৈমুর। তারপরই ঘটে বিপত্তি। টাওয়ারের একটি যন্ত্রাংশ ভেঙে সেফটি বেল্ট ছিঁড়ে প্রায় ৪২ মিটার উপর থেকে নীচে পড়ে যান তৈমুর। তাঁর চোখের সামনে এই ঘটনা ঘটায় প্রথমে তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। এরপর ঠিকাদার সংস্থার লোকদের ডেকে পাঠান। নিয়ে আসা হয় অ্যাম্বুল্যান্স। কিন্তু হাসপাতাল যাওয়ার পথে তাঁর ভাইয়ের মৃত্যু হয়।
মাত্র বছর দুই আগে বিয়ে হয়েছে তৈমুরের। সংসারে রয়েছে স্ত্রী রুবিনুর খাতুন এবং মাস চারেকের ছেলে রিয়াজ শেখ। এদিন গ্রামে ফেরে তৈমুরের দেহ। তাঁর বাড়িতে যান বৈরগাছি-১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কোহিনুর খাতুন। রাজ্য সরকারের তরফে তৈমুরের পরিবার যাতে সবরকম সাহায্য পান তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি। তৈমুরের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়।