গাজোল: যাদবপুরের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় শোরগোল পড়ল। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় সিনিয়রদের অত্যাচারকেই দায়ী করল মৃতের পরিবার। মৃতের নাম উত্তম মার্ডি (২২)। বাড়ি গাজোলের মাঝরা গ্রাম পঞ্চায়েতের শিশাডাঙ্গা গ্রামে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল সে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে স্নান করতে যায় উত্তম। তবে দীর্ঘক্ষণ পেরিয়ে গেলেও বাথরুম থেকে না বের হওয়ায় তাকে ডাকাডাকি শুরু করে বোন সুমিত্রা। সাড়া না পেয়ে বাথরুমের দরজা ভেঙে পরিবারের লোকজন দেখেন, ভেন্টিলেটরের রডের সঙ্গে ঝুলছে উত্তমের দেহ। তড়িঘড়ি উত্তমকে উদ্ধার করে গাজোল গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠায় পুলিশ।
এদিকে, এই ঘটনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রমৃত্যুর ছায়া দেখছে মৃতের পরিবার। উত্তমের জেঠতুতো দিদি পাঞ্চালি মার্ডি জানায়, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস নিয়ে এমএ করার সুযোগ পায় উত্তম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যাসাগর হস্টেলে থাকার সুযোগও পেয়ে যায়। গত ৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তবে ৫ অক্টোবর উত্তমকে ফোন করা হলে সে হঠাত্ই কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলে। জিজ্ঞেসা করা হলে উত্তম জানায়, ৪ অক্টোবর ইন্ট্রো দেওয়ার নাম করে রাত ১২টা নাগাদ হস্টেলের সিনিয়াররা প্রথম বর্ষের ছাত্রদের ডেকে পাঠায়। কিন্তু ক্লান্ত থাকায় উত্তম সেদিন যেতে পারেনি। পরের দিন তার এক সহপাঠী উত্তমকে জিজ্ঞেস করেছিল, কেন সে ইন্ট্রো দিতে যায়নি। এই ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবে যথেষ্ট ঘাবড়ে গিয়েছিল উত্তম। তাকে বলা হয়েছিল, ওখানে আর থাকার দরকার নেই। এরপর ৬ অক্টোবর বাড়ি ফিরে আসে উত্তম। ওখান থেকে আসার পর মানসিকভাবে যথেষ্ট ভেঙে পড়েছিল। নানাভাবে জিজ্ঞেস করার পর উত্তম জানিয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ট্রোর নামে নানা ধরনের অত্যাচার করা হত তাদের ওপরে। অশ্লীলভাবে শরীরের নানা জায়গায় স্পর্শ করত সিনিয়ার দাদারা। এক একদিন এক এক হস্টেলের সিনিয়ার দাদাদের কাছে ডাক পড়ত জুনিয়ারদের। ওখানেই চলত নানা ধরনের অত্যাচার। বিষয়টি জানার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও তদন্ত করে কিনা, তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে গাজোলবাসী।