প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: কংগ্রেসের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ছেড়েছেন দল, গড়েছেন কাশ্মীরের নতুন রাজনৈতিক দল ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ আজাদ পার্টি। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদকে কংগ্রেসের একাংশে আজও ‘গদ্দার’ বলেই ডাকা হয়। পাটনায় আসন্ন বিরোধী দলীয় বৈঠক প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যেই তোপ দাগলেন আজাদ। জানালেন, নিতান্তই নিস্ফলা হতে চলেছে ২৩ জুনের হাইভোল্টেজ বিরোধী বৈঠক৷ তাঁর মতে, ‘পাটনার বিরোধী বৈঠক হল আসলে একসঙ্গে ছবি তোলার ভালো সুযোগ৷’
আগামী ২৩ জুন পটনায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের আহ্বানে এক ছাদের তলায় বৈঠকে বসতে চলেছেন দেশের প্রথম সারির ২০টি বিরোধী রাজনৈতিক দল৷ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি, সর্বোপরি মোদি বিরোধী অবস্থানে শান দেওয়া মূলত বিরোধী বৈঠকের উদ্দেশ্য। এই বৈঠকে যোগ দেবেন বলে সম্মতি দিয়েছেন রাহুল গান্ধি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এম কে স্টালিন, অখিলেশ যাদব, মল্লিকার্জুন খাড়গে, সীতারাম ইয়েচুরি সহ বিরোধী শিবিরের তাবড় নেতৃত্ব৷ এই আবহে পাটনায় নির্ধারিত বিরোধী বৈঠক নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করলেন কংগ্রেস ত্যাগী মোদি ঘনিষ্ঠ প্রবীণ রাজনীতিক গুলাম নবি আজাদ৷ তাঁর দাবি, পাটনার বৈঠক নিস্ফলা হবে৷ এর কারণ হিসেবে গুলাম নবি আজাদের যুক্তি, ‘বিরোধী ঐক্য তখনই লাভবান হবে যখন সবার জন্য কিছু বরাদ্দ থাকবে৷ সুবিধের এই ভাগে তারতম্য থাকতে পারে৷ এ ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের একে অপরকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই৷’
এই মর্মেই তৃণমূল নেত্রীর উদ্দেশ্যে গুলাম নবির প্রশ্ন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়বেন? তাঁর সুবিধে কি? তাছাড়া রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ বা ছত্তিসগড়ে তৃণমূলের কোনও বিধায়ক নেই, তাহলে সেখানে কংগ্রেসই বা মমতাকে কি দিতে পারে? কিছুই না৷’ একইরকম ভাবে দক্ষিণ ভারতে কংগ্রেসের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আজাদ৷ তাঁর মতে, ‘অন্ধ্রে কংগ্রেসের একটিও আসন নেই৷ ফলে সেখানে কংগ্রেস অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডিকে কি দিতে পারে? এর পালটা হিসেবে জগনমোহন বা কি দিতে পারেন কংগ্রেসকে?’ গুলাম নবির অভিযোগ, ‘আসলে পাটনার বিরোধী বৈঠক হল একসঙ্গে ছবি তোলার ভালো সুযোগ৷ লাভের লাভ কিছুই হবে না।’ তবে এক্ষেত্রে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ স্পষ্ট করেছেন যে তিনিও চান আগামী বছরের লোকসভা ভোটে বিজেপিকে পরাস্ত করুক বিরোধী শিবির৷ কিন্তু বিরোধীদের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে ঘোর সন্দেহ আছে তাঁর মনে, সেকথাও জানাতে ভোলেননি কাশ্মীরের এই ভূমিপুত্র৷ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘যদি কোনও রাজ্যে জোট সরকার গঠন করা হত তাহলে বিরোধী ঐক্য আরও অনেক বেশি মজবুত হত৷ এখানে বিরোধীদের একে অপরকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই৷’ গুলাম নবির পর্যবেক্ষণ, ‘নির্বাচন পূর্ববর্তী এবং নির্বাচন পরবর্তী জোটে ফারাক আছে৷ কারণ ভোটের আগের আসন বিন্যাস পালটে যাবে ভোটের পরে৷ সে ক্ষেত্রে অনেক বেশি যুক্তিগ্রাহ্য হতে পারে ভোট পরবর্তী জোট৷’
গুলাম নবির অভিমতকে সরাসরি খারিজ করেছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য৷ তাঁর কথায়, ‘রাজনীতিতে সব কিছু লেন-দেন বা ‘গিভ অ্যান্ড টেক পলিসি’ সম্পর্কের উপরে নির্ভরশীল নয়৷ হতে পারে রাজ্য স্তরের বিভিন্ন বিরোধী শক্তির রাজনৈতিক সমীকরণ আলাদা৷ কিন্তু এটা জাতীয় ইস্যু৷ স্বৈরতান্ত্রিক মোদি শাসনের অপসান ঘটাতে নিজেদের স্বীয় অবস্থানের ঊর্ধ্বে উঠে যদি বিরোধীরা একজোট হন তাহলে ক্ষতি কোথায়? তাই গুলাম নবির বক্তব্যের সঙ্গে কোনওভাবেই সহমত পোষণ করতে পারছি না৷’ গুলাম নবিকে এদিন আরও চাঁচাছোলা আক্রমণ শানিয়েছেন প্রবীণ তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর পালটা দাবি, ‘গুলাম নবি নিজেই কক্ষচ্যুত৷ তিনি নিজের দলের আস্থাভাজন হয়ে উঠতে পারেননি৷ তাঁর বিজেপি ঘনিষ্ঠতা সর্বজনবিদিত৷ এখন তিনি নিজে একটি দল গঠন করেছেন যা বিজেপির হয়ে কাজ করছে৷ গুলাম নিজে বিরোধী ঐক্য দুর্বল করার চেষ্টা করছেন৷ তাঁর বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া অর্থহীন৷’