রায়গঞ্জ: রায়গঞ্জ শহরের রাজপথের দখল নিয়েছিলেন ‘স্বর্গের দেবতারা’। রাজপথ ধরে হেঁটে চলেছেন বাঁশি হাতে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। পাশে লাঙ্গল কাঁধে দাদা বলরাম। সঙ্গে গাড়ি ও গো-বৎস সমেত রাখাল বালকের দল। অষ্টসখী গোপ-গোপিনীর সঙ্গে আছেন বড়াই বুড়ি, জটিলা কুটিলারাও। সোমবার সকালে সপার্ষদ রাখাল রাজা বৃন্দাবনের গোষ্ঠলীলা করতে নেমেছিলেন রায়গঞ্জের রাজপথে। এসব কোন মাটির তৈরি দেবদেবীর পুতুল বা মূর্তি নয়, শ্রীকৃষ্ণের গোষ্ঠযাত্রা উপলক্ষ্যে জ্যান্ত মানুষ নিজেকে সাজিয়েছেন শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীরাধিকা, বলভদ্র সহ তাদের নানা সহচর রূপে।
এদিন ছিল গোষ্ঠ উৎসব। বাংলায় এই গোষ্ঠ উৎসব তেমন চালু না হলেও রায়গঞ্জ শহরে এই অনুষ্ঠান ধুমধামের সঙ্গে হয়ে আসছে ৯৭ বছর ধরে। ধরে এই অত্যাধুনিক বিনোদনের যুগেও শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির ডাকে যেমন গোপীনীরা সব ফেলে ছুটে যেতেন শ্রীকৃষ্ণের কাছে, তেমন সোমবার সব কাজ ফেলে রায়গঞ্জের শিশু যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধার দল যোগ দিয়েছিলেন গোষ্ঠ মিছিলে। কেউ শ্রীকৃষ্ণের সহচর সেজে কেউ বা দর্শক হিসেবে। আজ থেকে ৯৭ বছর আগে এই উৎসবের প্রতিষ্ঠা করেন রায়গঞ্জের বন্দর এলাকার নিবাসী স্বর্গীয় পন্ডিত গোপালচন্দ্র মণ্ডল। বাংলাদেশের দিনাজপুরের মহারাজদের গোষ্ঠ উৎসবে গিয়ে তিনি পুত্র সন্তান লাভের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, যদি তার মনোস্কামনা পূর্ণ হয়, তিনিও গোষ্ঠ উৎসব পালন করবেন ধুমধামের সঙ্গে। এরপরই ১৯২৭ সালে তার তৃতীয় স্ত্রীর গর্ভে পুত্র সন্তান লাভ করেন। গোপাল বাবু ছেলের নাম রাখেন গোষ্ঠ বিহারী। পরে মানিকলাল মণ্ডল নামে পরিচিত হয় তিনি। গোপাল বাবু ও মানিক বাবুর পর উৎসবের দায়িত্ব এখন শ্রী রাম নারায়ণ মণ্ডল, শ্রী নারায়ণচন্দ্র মণ্ডল, বিদ্যুৎ দাস, মৃন্ময় কুন্ডু, তুষার কান্তি দাস, সুধাম চক্রবর্তীদের ওপর। তবে পারিবারিক এই উৎসব আজ সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। গঠিত হয়েছে উৎসব কমিটি বন্দর এলাকার অধিবাসীদের নিয়ে।
সভাপতি রাম নারায়ন মণ্ডল বলেন, ছয় দিনের উৎসব শুরু হয়েছে এদিন থেকে। আজকে হবে পদাবলী কীর্তন। মঙ্গলবার সকালে হবে গো-সেবা, রাত্রি সাড়ে সাতটায় হবে যুবনাট্য সম্প্রদায়ের পৌরাণিক পালা ‘কৃষ্ণ শকুনি’। বুধবার পদাবলী কীর্তন। বৃহস্পতিবার ধর্মীয় নৃত্যানুষ্ঠান। শুক্রবার গম্ভীরা গান। শনিবার হবে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।