বালুরঘাট: নির্ধারিত সময় থেকে সাড়ে ছয় ঘণ্টা দেরিতে স্টেশনে পৌঁছোয় ট্রেন। এতটা সময় ট্রেনে বন্দি থাকা যাত্রীদের ভোগান্তির কথা ভেবে আঁতকে উঠবেন অনেকেই। ঠিক এমনটাই ঘটল রবিবার। যেখানে শিয়ালদা থেকে বালুরঘাটে পৌঁছোনোর সময় ৯টা ১৫ মিনিট। সেখানে বিকেল সাড়ে তিনটায় এসে পৌঁছেছে ট্রেন। যদিও রেল দপ্তরের দোহাই, বৃষ্টি ও ট্র্যাকে জল জমে থাকার কারণে দেরিতে পৌঁছেছে ট্রেন। কিন্তু প্রায়দিনই এক থেকে দু’ঘণ্টা দেরিতে স্টেশনে ট্রেন পৌঁছোয় বলে অভিযোগ নিত্যযাত্রীদের। এছাড়া ট্রেনের শানটিং নিয়ে রেল চালকদের মধ্যে বিবাদের জেরে যাত্রীদের হয়রানি, কখনও ট্রেনের কামরা থেকেই টাকা, মোবাইল লুট, আবার কখনও আস্ত ট্রেনকেই উঠিয়ে দেওয়ার ঘোষণা। এভাবে মাঝেমধ্যেই লোকমুখে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে গৌর লিংক এক্সপ্রেস।
২০০৪ সালে রেলের মানচিত্রে বালুরঘাটের প্রবেশ ঘটেছিল। তারপরে দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে বালুরঘাটের যোগাযোগ রক্ষার তাগিদে এই ট্রেন চলাচল শুরু হয়। অনেক আশায় দ্রুততার সঙ্গে কলকাতায় পৌঁছে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল বালুরঘাটবাসী। কিন্তু সে গুড়ে বালি। শিয়ালদার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে এই ট্রেন রেলের সূচি অনুযায়ী প্রায় এক ঘণ্টা মালদা স্টেশনে অপেক্ষা করতে থাকে। আবার বালুরঘাটে ফেরার পথেও মালদাতে সকালে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে ট্রেন। কখনও আবার এই অপেক্ষার সময় দু’ঘণ্টাও পেরিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের একটি সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস স্টেশনে ঢুকেছে। ট্রেনের চালকের ডিউটির সময় ১২ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে বলে ট্রেন শান্টিং করবেন না বলে দাবি করেন। এদিকে গৌড় লিংক ছাড়ার সময় হয়ে গিয়েছে। চালক আবার ট্রেনকে শানটিং অবস্থায় না পেলে ইঞ্জিন বসাবেন না বলে জানান। ফলে দুই চালকের মধ্যে বিবাদের জেরে ট্রেন ছাড়ার সময় অতিক্রম হতে থাকে। যাত্রীদের হয়রানির কথা না ভেবে তখনও নির্বিকার রেল। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে তো রেল দপ্তরের তরফেই এই ট্রেন তুলে দেওয়ার কথা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়। যার ফলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন জেলাবাসী। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে মালদায় রীতিমতো দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে এই ট্রেন। অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে বিশ্বাস পাড়ার এক বাসিন্দার মোবাইল, সোনার চেন সহ টাকা পয়সা লুট করে নেয় দুষ্কৃতীরা।
একলাখি বালুরঘাট রেল যাত্রী কল্যাণ ও সমাজ উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান স্মৃতিস্বর রায়ের অভিযোগ, ‘মালদা স্টেশনে ট্রেনটি দীর্ঘদিন ধরে জনগণের কোনও মান্যতাপ্রাপ্ত কারণ ছাড়াই শুধু রেলের একগুঁয়েমি ও বালুরঘাট লাইনকে অবজ্ঞা করার জন্যই প্রায় দুই ঘণ্টা দাঁড় করে রাখা হয়। আমিও এর ভুক্তভোগী। বহুবার ডিভিশনাল রিজিওনাল ম্যানেজার থেকে বিভিন্ন মহলে জানিয়েছি। কোনও সুরাহা হয়নি। ট্রেনে সংরক্ষিত কামরা হলেও কোনও রেলরক্ষী থাকে না। এই সুযোগে ছিনতাই ও লুট হতেই থাকে। কোনওভাবেই রেল কর্তৃপক্ষ জনগণের কথা শুনছেন না।’
বালুরঘাট রেল স্টেশনের ম্যানেজার নিশান্ত ঝাঁ জানান, ‘গত শুক্রবার পর্যন্ত কলকাতায় ইঞ্জিনিয়ারিং ব্লক তোলার কাজ চলছিল। তাই ট্রেন দেরি হচ্ছিল। মালদায় ট্রেন শান্টিং এর জন্য এক ঘণ্টা সময় লাগে। গৌড় লিঙ্ক মালদায় দেরি করে ঢুকলে, দেরি করে স্টেশন থেকে ছাড়ে।’