রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: রক্তশূন্য ব্লাড ব্যাংক(Blood Bank)। প্রায় আড়াই মাস ধরে সেভাবে কোনও রক্তদান শিবির না হওয়ায় উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাংকে রক্তের জোগান নেই। যেটুকু সঞ্চয়ে ছিল, তা রোগীদের দু’দিন দিয়েই শেষ হয়ে গিয়েছে। ফলে এখন রক্তের জন্য হাহাকার করছেন রোগীরা। বাধ্য হয়ে মেডিকেলে চিকিৎসাধীনদের জীবন বাঁচাতে পরিবারকে ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি ব্লাড ব্যাংকে। একই অবস্থা শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকেও। এখানেও রক্তের ভাঁড়ার প্রায় শূন্য। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা অনিশ্চিত।
আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাংক অধিকর্তা মৃদুময় দাস বলছেন, ‘শিবির হচ্ছে না। যে কয়েকটা শিবির হচ্ছে, সেগুলো থেকে সংগৃহীত রক্ত জমা হচ্ছে বেসরকারি ব্লাড ব্যাংকে। ফলে আমাদের ব্লাড ব্যাংকে এই মুহূর্তে এক ইউনিট রক্তও সঞ্চিত নেই।’ মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রোগীদের প্রয়োজনে রক্ত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
উত্তরবঙ্গ মেডিকেলের আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাংকে প্রতিদিন ১০০ ইউনিটের বেশি রক্তের চাহিদা রয়েছে। মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রোগীর পাশাপাশি শিলিগুড়ির বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম থেকেও রক্তের জন্য আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাংকে আবেদন আসে। কিন্তু গত তিন মাস ধরে মেডিকেলের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্লাড ব্যাংক অধিকর্তার বক্তব্য, ‘মেডিকেলের অন্তর্বিভাগে চিকিৎসাধীন রোগী এবং থ্যালাসিমিয়ায় আক্রান্তদের মিলিয়ে প্রতিদিন ৮০-৯০ ইউনিট রক্ত প্রয়োজন হয়। সেটাই তো দিতে পারছি না। তাহলে বাইরে রক্ত দেব কীভাবে?’
শনিবার ব্লাড ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে সুবোধ ছেত্রী নামে এক ব্যক্তি বললেন, ‘প্রসূতি বিভাগে বৌমা ভর্তি রয়েছে। চিকিৎসক দুই ইউনিট রক্ত জোগাড় করে আনতে বলেছেন। দু’দিন ধরে ব্লাড ব্যাংকে হন্যে হয়ে ঘুরছি। বলছে রক্ত নেই।’ তাঁকে চিকিৎসক বলেছেন, ‘দুজন রক্তদাতা নিয়ে আসুন, তাহলে কিছু একটা উপায় বের হতে পারে।’ আক্ষেপের সুরে সুবোধ বলছেন, ‘আমি তিনধারিয়ায় থাকি। কোথা থেকে রক্তদাতা নিয়ে আসব বলুন তো!’
ব্লাড ব্যাংক সূত্রের খবর, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ক্লাব, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে বেশিরভাগই এখন বেসরকারি ব্লাড ব্যাংকে রক্ত দেয়। কয়েকবছর ধরে এই প্রবণতা শুরু হয়েছে। ফলে সরকারি ব্লাড ব্যাংকে পরিষেবা চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। গত ১৬ মার্চ লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে কোনও সংস্থাই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেনি।
একদিকে রক্ত নেই, অপরদিকে কোনও ভিভিআইপি এলে মেডিকেল টিম পাঠাতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর মতো ভিভিআইপিদের মেডিকেল টিমে অন্তত পাঁচ ইউনিট রক্ত মজুত রাখতে হয়। সেই রক্ত জোগাড় করতেই কালঘাম ছুটেছে ব্লাড ব্যাংক কর্তাদের।
একই সমস্যায় পড়েছে বর্ধমান রোডের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন এক রোগীর পরিবার। সন্দীপ সাহা ওই রোগীর আত্মীয়। জানাচ্ছেন, নার্সিংহোম থেকে রাতের মধ্যে এক ইউনিট রক্ত জোগাড় করতে বলা হয়েছে। সন্দীপ বলছেন, ‘বেসরকারি ব্লাড ব্যাংকে গিয়েছিলাম। সেখানে অনেক টাকা চাইছে। তাই মেডিকেলে এসেছি। কিন্তু এখানেও রক্ত নেই।’ কীভাবে যে রক্ত জোগাড় করবেন, তা বুঝতে না পেরে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সন্দীপের মতো অনেকেই।