কোচবিহার: আলাদা রাজ্যের দাবির আন্দোলনকে জোরদার করে তুলতে ও ঘুমিয়ে থাকা ভূমিপুত্র ও রাজবংশীদের নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে এবার কোচবিহারবাসীর প্রাণের ঠাকুর মদনমোহনের দ্বারস্থ হলেন গ্রেটার নেতা বংশীবদন বর্মন। মঙ্গলবার মদনমোহন ঠাকুরবাড়িতে এসে মদনমোহনের জন্য একটি সোনার বাঁশি দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন তিনি। এছাড়াও মদনমোহনের পুজোর জন্য বিভিন্ন সামগ্রীর পাশাপাশি মন্দিরে থাকা আনন্দময়ী কালী, মা তারা ও মা ভবানীর জন্য পুজোয় বলির উদ্দেশ্যে কালো পাঁঠাও দেন তিনি। নিজেদের সাংগঠনিক দাবির বাস্তবায়নে ও সংগঠনকে শক্তিশালী করে তুলতে বংশীর মদনমোহনের দ্বারস্থ হওয়ার ঘটনার কথা জানাজানি হতে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। এদিন বংশীর সঙ্গে তাঁর সংগঠনের বিশিষ্ট বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ নিখিলচন্দ্র রায় এবং আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন। মন্দিরে উপস্থিত সকলের গলাতেই গ্রেটারের হলুদ গামছা ও লক্ষ্য করা গিয়েছে।
মদনমোহনকে বাঁশি দেওয়া প্রসঙ্গে বংশী বলেন, ‘মদনমোহনের মূল অস্ত্রই হচ্ছে বাঁশি। সাংগঠনিক দিক দিয়ে আমাদের ভূমিপুত্র ও রাজবংশী মানুষগুলোকে দীর্ঘদিন ধরে নিজের অধিকার, নিজের সত্ত্বা সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা আমরা করে আসছি। এতে অনেকটা সফলতাও পেয়েছি। তবে এখনও অনেক মানুষ ঘুমিয়ে রয়েছেন। তাই মদনমোহন বাবার কাছে আমাদের আর্জি তিনি যেন তাঁর হাতের এই বাঁশি বাজিয়ে ঘুমিয়ে থাকা সেই মানুষগুলোকে উঠিয়ে তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেন।’
প্রসঙ্গত, ভারতভুক্তি চুক্তি মোতাবেক কোচবিহারকে ‘গ’ শ্রেণির রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বংশীবাদন বর্মনরা দীর্ঘ বছর যাবৎ তাঁদের আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। কোচবিহারে যা পৃথক রাজ্যের আন্দোলন হিসেবেই পরিচিত। এনিয়ে মাঝেমধ্যেই কোচবিহারে বিশাল মিছিল, সভা করে তাঁদের আন্দোলন করতেও দেখা যায়। যদিও রাজ্য সরকার বাংলাকে কোনওভাবেই ভাগ হতে দেবে না বলে দীর্ঘদিন ধরেই জানিয়ে আসছে। এই অবস্থায় তৃণমূল ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্বেও বংশীদের সেই দাবি কিন্তু পূরণ হয়নি। তৃণমূল সূত্রে খবর, লোকসভা নির্বাচনের আগে আগামী জানুয়ারি মাসে কোচবিহারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসার কথা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কার্যত তাদের সাংগঠনিক দাবির বাস্তবায়নে মঙ্গলবার বংশীর মদনমোহনের দ্বারস্থ হওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট গুঞ্জন ছড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে অবশ্য বংশীবদন বর্মন বলেন, ‘মদনমোহনকে সন্তুষ্ট করার জন্য পুজো দিলাম। এখানে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।’