গৌরহরি দাস, কোচবিহার: আর আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি নয়। আগে যে সুরে যে ভঙ্গিমাতে কথা বলতেন, সেই সুরেও নয়। বরং সাংসদ হওয়ার পর তাঁর সুর আগের তুলনায় এখন অনেক নরম। তিনি এখন বিজেপির (BJP) সুরে কথা বলছেন। আর তাতেই গ্রেটার নেতা নগেন রায়ের (Greater Leader Nagen Roy) জনপ্রিয়তাতে ভাটা পড়তে শুরু করেছে। এ নিয়ে লোকসভা ভোটের (Loksabha Election) আগে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিজেপি।
সাংসদ নিজে অবশ্য বলছেন, ‘আলাদা রাজ্য এখানকার মানুষের দাবি। তাই আলাদা রাজ্য হবেই।’ তাঁর মুখে কেন আলাদা রাজ্যের কথা আর শোনা যাচ্ছে না, এ প্রশ্নের জবাব অবশ্য সাংসদ কিছুটা এড়িয়ে গিয়েছেন।
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বিশেষ করে কোচবিহারে নির্বাচনে ভালো ফলাফলের অন্যতম চাবিকাঠি হচ্ছে রাজবংশী ভোট। এই রাজবংশী ভোটের মূল অংশ দীর্ঘদিন ধরে ছিল নগেন রায় তথা অনন্ত মহারাজের সঙ্গে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচন ও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহারে বিজেপির কাছে তৃণমূলের মুখ থুবড়ে পড়ার পিছনেও ছিল নগেনপন্থী রাজবংশীদের ভোট।
নগেনপন্থী গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম দাবি ছিল উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য গঠন অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা। এমনকি সংগঠনের নগেন রায়কেও বিভিন্ন সভায় ভাষণে এই দাবি করতে শোনা যেত। এই কারণেই রাজবংশীদের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ছিল। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বিজেপির ঘনিষ্ঠ থাকায় লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে সেই লাভের ফসল ঘরে তুলছিল বিজেপি।
কিন্তু তাঁর সঙ্গে তৃণমূল ঘনিষ্ঠতা বাড়ানো শুরু করতেই বিজেপি জুজু দেখতে শুরু করে। ঝুঁকি না নিয়ে কয়েক মাস আগে বিজেপি তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করে নেয়। ফলে গ্রেটার নেতা অনন্ত মহারাজ রাতারাতি বিজেপির সাংসদ নগেন রায় হয়ে যান। পার্টির গাইডলাইন অনুযায়ী তাঁর মুখে এখন আর আগের মতো আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবির কথা শোনা যায় না। বরং এখন তিনি বিভিন্ন জায়গায় উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের কথা বলেন। কেউ এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সন্তর্পণে বিতর্ক এ ড়িয়ে বলেন, ‘সময়ের অপেক্ষা করতে হবে।’
নেতার এমন পরিবর্তনে তাঁর সংগঠনেও এখন ভাটার টান। রাজবংশীদের একাংশের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, যা উন্নতি হওয়ার তা সবই মহারাজের হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তাঁর পাশে থাকা রাজবংশী সাধারণ জনগণের তো কোনও উন্নতি হয়নি। পাশাপাশি রাজবংশীদের একটা বড় অংশ তাঁদের ভিটেমাটির অধিকারের জন্য লড়াই করে আসছিলেন। তাঁরা তৃণমূল বা বিজেপি কোনও পার্টিকে সমর্থনের জন্য নগেন রায়ের পাশে ছিলেন না। তাঁদের নেতা বিজেপির সাংসদ হয়ে যাওয়ায় অনুগামীদের একাংশের মধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে।
এর পাশাপাশি আরও কিছু কারণ রয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, কোচবিহারে এসে অমিত শা নারায়ণী সেনা গঠনের কথা বলে গেলেও এখনও পর্যন্ত কিছুই হয়নি। এমনকি গত কয়েক বছর ধরে কোচবিহারে বিজেপির সাংসদ ও বিধায়করা তেমন কোনও কাজও করে দেখাতে পারেননি। এতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েছে। ফলে সবমিলিয়ে নির্বাচনের আগে বিজেপির মধ্যে একটা অস্বস্তি শুরু হয়েছে।
বিজেপির প্রাক্তন জেলা সহ সভাপতি সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘একটা বিষয় নিয়ে প্রায় দীর্ঘ কুড়ি বছর যাবৎ বিভিন্ন নেতা যে প্রতিশ্রুতি রাজবংশী জনসমাজকে দিয়েছেন, সেই প্রতিশ্রুতি পালনে সকলেই প্রায় ব্যর্থ। সে কারণে দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকার কারণে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে।’