রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: সমতল থেকে সরাসরি গাড়িতে শৈলশহরে পৌঁছানোর দিন হয়তো ফুরোচ্ছে। নিত্য যানজটের দুর্ভোগ কমাতে ঘুমকে ‘জংশন’ করতে চাইছে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (GTA)। ফলে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে অদূরভবিষ্যতে সমতলের গাড়িগুলিকে ঘুমেই পর্যটক সহ সমস্ত যাত্রী নামিয়ে ফিরতে হবে। আর দার্জিলিং পৌঁছাতে সেখান থেকে লোকাল ট্যাক্সি নেওয়া ছাড়া অন্য উপায় থাকবে না। তবে, এমনটা হলে যে পর্যটক সহ আমজনতার দুর্ভোগ আরও বাড়বে সেটা স্বীকার করছে সবপক্ষই। পাশাপাশি, দার্জিলিংয়ের স্থানীয় গাড়িগুলিকে ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়ার ছক কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু জিটিএ’র দাবি, যানজটের জেরে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের(Tourist) মধ্যে দার্জিলিং(Darjeeling) নিয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতেই ঘুমকে জংশন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
দার্জিলিংয়ের পর্যটন ব্যবসায়ীরাও এই পরিকল্পনায় আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, এভাবে দার্জিলিংয়ের যানজট সমস্যা মেটানোর সম্ভব নয়, বরং সমস্যা আরও বাড়বে। দার্জিলিং অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রাভেল অপারেটর্স-এর সম্পাদক প্রদীপ লামা বলছেন, ‘এসব আজগুবি ভাবনা। ঘুমে যত গাড়ি এসে পর্যটক নামাবে, সেই পর্যটকদের দার্জিলিংয়ে নিয়ে আসার মতো অত গাড়ি এখানে নেই। ফলে পর্যটকদের দুর্ভোগ বাড়বে।’
দার্জিলিংয়ে প্রতিটি পর্যটন মরশুমেই পর্যটক থেকে আমজনতা সকলকেই তীব্র যানজটে নাজেহাল হতে হচ্ছে। সোনাদা পার হওয়ার পরই যানজটের জেরে গাড়ির গতি কমতে শুরু করে। ঘুমের আগে থেকেই শয়ে-শয়ে যাত্রীবাহী গাড়ি দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকে। ফলে বেড়াতে এসে চরম দুর্ভোগে পড়েন পর্যটকরা। আর যানজটের জেরে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তিও কম হচ্ছে না। কিন্তু এই যানজট সমস্যা কাটিয়ে ওঠা নিয়ে নানা মহলে নানা মত রয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই জিটিএ ঘুমকে জংশন করার কথা ভাবছে। শিলিগুড়ি থেকে ১১০ নম্বর জাতীয় সড়ক (পুরানো ৫৫ নম্বর) ধরে সিংহভাগ গাড়ি ঘুম-জোড়বাংলো হয়ে দার্জিলিং যায়। মিরিক, সুখিয়াপোখরির দিক থেকেও এই ঘুম হয়েই দার্জিলিং যেতে হয়। আবার কালিম্পং, সিকিম থেকে যে সমস্ত গাড়ি তিস্তাবাজার, পেশক রোড হয়ে দার্জিলিংয়ে আসে সেগুলিও ঘুমে এসেই হিলকার্ট রোড ধরে। ফলে যানজটের সূত্রপাত এই ঘুম-জোড়বাংলো থেকেই।
জিটিএ’র শীর্ষস্থানীয় এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ঘুমে একটি বড় স্ট্যান্ড তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি এখানে বহুতল পার্কিং জোন তৈরি করা হবে। শিলিগুড়ি এবং সিকিম, কালিম্পং থেকে যে সমস্ত গাড়ি দার্জিলিংয়ে আসবে সেই গাড়িগুলিকে ঘুমেই যাত্রী নামিয়ে ফিরতে হবে। ঘুম থেকে লোকাল ট্যাক্সিতে পর্যটক সহ অন্যরা দার্জিলিংয়ে যাতায়াত করবেন। এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন হলে দার্জিলিংয়ের পথে যানজটে অনেকটাই রাশ টানা সম্ভব বলে মনে করছেন জিটিএ’র মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক এসপি শর্মা। তাঁর বক্তব্য, ‘বাসস্ট্যান্ডের জন্য ঘুমে একটি জায়গাও দেখা হয়েছিল। কিন্তু সেই জায়গা নিয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে। তাই নতুন করে জায়গা খোঁজা হচ্ছে।’
পুরো পরিকল্পনার পেছনে লোকাল ট্যাক্সিকে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। এখন যে ভাড়ায় পর্যটকরা দার্জিলিংয়ে পৌঁছান, নয়া নিয়ম কার্যকর হলে পর্যটকদের আরও বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে। এমনকি স্থানীয় ট্যাক্সিচালকরা মর্জিমাফিক ভাড়া আদায় করলে সেই দায়িত্ব কে নেবে? প্রশ্ন ঘুরছে পর্যটন মহলে।