নৃসিংহপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়, বারবিশা: সফল হতে কে না চায়। কিন্তু প্রতিটি সফলতার পেছনে এক-একটি লড়াইয়ের গল্প থাকে। কিন্তু সেই গল্পগুলি প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা হয়। তবে একথা ঠিক মনের জোর আর শারীরিক সক্ষমতা থাকলে হাজারও প্রতিবন্ধকতা সহজেই জয় করে নেওয়া যায়। তবে বারবিশার অমৃকা রায়ের গল্পটা আরও একটু ভিন্ন। সরকারি শংসাপত্র অনুযায়ী ৯০ শতাংশ বিশেষভাবে সক্ষম সে। চলাফেরা থেকে নাওয়াখাওয়া সবেতেই অসুবিধে। কানেও কম শোনে। দু’হাতের আঙুল বেঁকে যাওয়ায় অমৃকা কলমও ধরতে পারে না। শুধু দু’চোখে সমস্যা নেই তাঁর। তাই বই পড়তে অসুবিধে হয় না। শারীরিক এত অসুবিধাও তার লেখাপড়ার ইচ্ছেকে দমাতে পারেনি। সব বাধাকে দূরে সরিয়ে রেখে রাইটারের সাহায্য নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল সে। সফলতার গল্প বুনতে, মনের অদম্য জেদকে অবলম্বন করে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে অমৃকা।
দলদলি হাইস্কুলের ছাত্রী অমৃকার পরীক্ষার সেন্টার পড়েছে বারবিশা বালিকা বিদ্যালয়ে। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা পরীক্ষার জন্য তাকে শুভকামনা জানিয়েছেন। দলদলি হাইস্কুলের টিচার ইনচার্জ হরেনচন্দ্র রায়ের বক্তব্য, ‘শারীরিক সমস্যার জন্য অমৃকা স্কুলে কম আসত। পরীক্ষার দিনগুলিতে সে মায়ের সঙ্গেই স্কুলে আসত। মাধ্যমিকের মতো এবারও রাইটারের সহযোগিতা নিয়েই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে সে। অমৃকার সাফল্য কামনা করছি।’
দলদলি শিববাড়ির বাসিন্দা অমৃকার বাবা ধর্মনারায়ণ রায় পেশায় কাঠমিস্ত্রি। তাঁর সংসারে স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে ও বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছে। কোনওরকমে টেনেটুনে অভাবের সংসার চলছে। তিনি জানান, বড় মেয়ে অমৃকা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই জন্মেছে। মেয়ের মনের ইচ্ছেপূরণে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ধর্মনারায়ণ বলেন, ‘মেয়েকে শিক্ষিত করে তোলার পেছনে ওর মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। কারণ সংসারের যাবতীয় কাজ সামলে মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, ছুটির পর বাড়ি নিয়ে আসা, সবই স্ত্রীকে করতে হয়।’
অমৃকাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য জন্য টোটো ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু গাড়িতে ওঠানামা করাটা তার পক্ষে প্রচণ্ড কষ্টের। মেয়েকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া, পরীক্ষা শেষে বাড়ি নিয়ে আসা সমস্ত দায়িত্ব তাঁর মা-ই পালন করছেন। মা অনীতা রায়ের কথায়, ‘পাশের গ্রাম ঘাকসাপাড়ার এক ছাত্রী তার রাইটার। সব বাধা সরিয়ে রেখে নিজের ইচ্ছেপূরণে মেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে, এটা আমার কাছে অনেক শান্তির, মানসিক তৃপ্তির।‘