হরিশ্চন্দ্রপুরঃ স্কুলের চাকরি থেকে সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুর তুলসিহাটা এলাকার বাসিন্দা সতীশ চন্দ্র দাস। এলাকায় তিনি পশুপ্রেমী হিসেবেই পরিচিত। আর এই পশুপ্রেমই কাল হল তাঁর। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সতীশবাবুর বাড়িতে দফায় দফায় হামলার অভিযোগ উঠল প্রতিবেশীদের একাংশের বিরুদ্ধে। গ্রামের একাংশের দাবি একটি পথ কুকুরের হানায় আহতদের দায়ভার তাঁকে নিতে হবে। কারণ, ওই কুকুরটিকে দুবেলা খেতে দিতেন এই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার এলাকারই একটি পথকুকুর আচমকাই এক বালক ও কয়েকটি গবাদি পশুকে কামড়ায়। ওই কুকুরটিকে দীর্ঘদিন ধরেই দুবেলা খেতে দিতেন হরিশ্চন্দ্রপুর তুলসিহাটা এলাকার বাসিন্দা সতীশ চন্দ্র দাস। সম্প্রতি তিনি সরকারি স্কুলের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি হরিশ্চন্দ্রপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষও। এলাকায় পশুপ্রেমী বলে তাঁর পরিচয় রয়েছে। পথ কুকুর, গবাদি পশু, পাখীদের পরিচর্য়ার পাশাপাশি তিনি তাদের খেতেও দিতেন। স্থানীয়দের দাবি, যে কুকুরটি হামলা করেছে, তাকে বৃদ্ধ খেতে দিতেন, তার বাড়ির সামনেই থাকত কুকুরটি, ফলে কুকুরটি যে কামড়েছে তার দায়ভার নিতে হবে সতীশবাবুকেই।
এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্থানীয়দের একাংশ সালিশি ডেকে বৃদ্ধকে সেখানে যেতে বলেন। কিন্তু মারধরের আশঙ্কায় বৃদ্ধ সালিশিতে যেতে চাননি। এরপরই তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে এদিন গভীর রাতে দফায় দফায় সতীশবাবুর বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। এলাকায় ব্যপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হামলা হতেই আতঙ্কে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। আতঙ্কে তিনি অচেতন হয়ে পড়লেও সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি পরিবারের লোকেরা। কারণ তাঁদের বাধা দেন বাড়ির সামনে দল বেঁধে থাকা আক্রমনকারীরা।
এদিকে এই ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানার বিরাট পুলিশবাহিনী। পুলিশের সামনেই উত্তেজিত জনতা কুকুরে কামড়ানোর ফয়সালা করার দাবি জানাতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসার পর পুলিশ সতীশবাবুকে উদ্ধার করে চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। আরও দেরী হলে বৃদ্ধের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল বলে চিকিৎসক জানান।
চাঁচলের এসডিপিও সোমনাথ সাহা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি এসবও পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। পুলিশ তার কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করেছে।’ বৃদ্ধের ছেলে প্রিয়ঙ্ক দাস বলেন, ‘পুলিশ সময়ে না আসলে বাবাকে বাঁচাতে পারতাম না। বাড়ি ফিরলে কী হবে, তা নিয়ে আমরা এখনও উদ্বেগে রয়েছি।’ চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সহকারী সুপার ত্রিদিব মাইতি বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপের জন্য বৃদ্ধের প্রাণ সংশয়ও হতে পারত। চিকিৎসা চলছে। তাঁর অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল।’