প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: চলতি মাসের শেষার্ধে পাহাড়ে আসছেন প্রাক্তন বিদেশ সচিব তথা জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের চিফ কো-অর্ডিনেটর হর্ষবর্ধন শ্রীংলা। তবে এ যাত্রায় কোনও কূটনীতিক আলোচনা বা রাজনৈতিক সমীকরণে মাপজোখ নয়, আসছেন নিজের বই নিয়ে আলোচনা করতে। কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গেছে, শ্রীংলা আসছেন তাঁর সদ্য প্রকাশিত আত্মজীবনী-‘নট এন অ্যাক্সিডেন্টাল রাইজ'(বাংলায় ‘দার্জিলিং থেকে দুনিয়া) বইটি নিয়ে আলোচনায় যোগ দিতে। বাংলা, ইংরাজি, হিন্দি ছাড়াও নেপালি ভাষাতেও অনূদিত হয়েছে এই বই। আগামী ২৫ জুন কলকাতার তাজ বেঙ্গল হোটেলে ‘ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অফ কমার্স’ আয়োজিত এনিয়ে বিশেষ এক আলোচনা সভা অলঙ্কৃত করবেন শ্রীংলা। তাঁর কূটনৈতিক এবং ‘প্রাণের শহর’ দার্জিলিং নিয়ে রুদ্র চ্যাটার্জীর সঙ্গে বসবেন আলোচনায়। এর পরেই সরাসরি বাগডোগরা হয়ে ২৭ জুন শিলিগুড়ি পৌঁছবেন তিনি৷ জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে চিফ কোঅর্ডিনেটর হিসেবে শিলিগুড়ির ম্যারিওট হোটেলে ওয়াই২০ সভায় অংশগ্রহণ করবেন শ্রীংলা। এর পর ২৮ জুন কালিম্পং এ এপিলগ বুক কাফেতে তাঁর বই নিয়ে আলোচনা, ২৯ ও ৩০ জুন দার্জিলিং এ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি এবং গোর্খা রঙ্গমঞ্চে দার্জিলিং হিল ইউনিভার্সিটির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রূপে অংশগ্রহণ করবেন তিনি৷ প্রাক্তন বিদেশ সচিব ও মোদীর একান্ত স্নেহভাজন হর্ষ বর্ধন শ্রীংলার এই পাহাড় সফরের নেপথ্যে মূল কারণ কী শুধু পুস্তকধর্মী আলোচনা নাকি অন্য কোনও বিষয়, সে নিয়ে শুরু হয়েছে কেন্দ্রে শুরু হয়েছে প্রবল জল্পনা।
বস্তুত, পাহাড়ের সঙ্গে দীর্ঘদিনের আত্মিক যোগাযোগ শ্রীংলার। দার্জিলিঙের আদি বাসিন্দা হিসাবে শ্রীংলার পাহাড়ে যথেষ্ট ভালো পরিচিতি রয়েছে। নেপালি ভাষা তাঁর কণ্ঠস্থ। পাহাড় জুড়ে আজও ছড়িয়ে আছে তাঁর আত্মীয়স্বজন। এ ছাড়াও পাহাড়ের অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে তাঁর নিত্য যোগাযোগ রয়েছে। গত বছরের শেষ থেকে দার্জিলিং শহরে জি২০-র মতো শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নেন শ্রীংলাই। এক্ষেত্রে শোনা গেছে অন্য এক বিশেষ সম্ভাবনার কথাও। আসন্ন ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিং থেকে বিজেপির টিকিটে প্রার্থী হতে পারেন শ্রীংলাই, এমনও জল্পনা কিন্তু রয়েছে৷ জল্পনা সত্যি প্রমাণিত হলে যশবন্ত সিংহ, সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া, রাজু বিস্তার উত্তরসূরী হতে পারেন তিনি। দার্জিলিং আসনের জেতাহারা বরাবর পাহাড়ের একটি বড় অংশের ভোটের উপর নির্ভর করে থাকে তা সকলেই জানে। অর্থাৎ দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং বা মিরিকে যে প্রার্থী বেশি ভোট পান তাঁর জয়লাভ শতকরা ৯০ শতাংশ চূড়ান্ত। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে শ্রীংলার পাহাড় জুড়ে সফরকালে দার্জিলিং, কালিম্পং পেয়েছে কিন্তু বিশেষ প্রাধান্য। সেখানে নিছক বই নিয়ে তাঁর আলোচনা নয়, বিভিন্ন জনসভা ও সমাবেশেও থাকবে তাঁর প্রাঞ্জল উপস্থিতি। তা-ই সব সূত্র খতিয়ে বইপ্রকাশ ও আলোচনার আড়ালে তিনি যে পাহাড়ের আম জনসাধারণের সঙ্গেও উন্মুক্ত বার্তালাপ করবেন, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় শিবিরে।
বিশেষজ্ঞরা এও মনে করছেন, পাহাড়ে তাঁর শেষ চার পূর্বসূরিরা কেউই ভূমিপুত্র ছিলেন না, কিন্তু দার্জিলিং এর আদি বাসিন্দা হিসেবে অনায়াসে ভূমিপুত্রের তকমা ও তাকে ঘিরে আবেগ অতি সহজেই স্পর্শ করতে পারবেন শ্রীংলা, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ৷ এছাড়া পাহাড়ের সর্বমহলে, সর্বশিবিরে তাঁর অনায়াস যাতায়াত, পাহাড়ের মানুষের আবেগ বুঝে চলার সহজাত কৌশল তাঁর করায়ত্ত। সব মিলিয়ে, প্রাক্তন বিদেশ সচিবের আসন্ন পাহাড় সফরকে নিছকই পুস্তকপ্রেমের পর্যায়ে ফেলতে নারাজ ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। এই সফরকে অবশ্য কোনও রাজনীতির সঙ্গে জুড়তে চান না শ্রীংলা, জানা গেছে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে৷ তবে সত্য উদঘাটন হতেও বেশি দেরি নেই বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় মহলের শীর্ষ নেতৃত্বরা।