রায়গঞ্জঃ সদ্যজাত কন্যাসন্তানকে নিজের পাশে শুইয়ে রেখে শুক্রবার রায়গঞ্জ মেডিকেল হাসপাতালের শয্যায় জীবনের দ্বিতীয় বড় পরীক্ষা দিলেন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এক প্রসূতি মা। ইটাহারের সুই নদীর ধারে পাড়াহরিপুর হাই স্কুলের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রী নাজিমা খাতুন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে যথারীতি ইটাহারের চূড়ামন প্রহ্লাদচন্দ্র হাই স্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রে উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় পরীক্ষা যথাক্রমে বাংলা এবং ইংরেজি পরীক্ষা দিয়েছেন ওই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সব ঠিকঠাকই যাচ্ছিল। শুক্রবার নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী দর্শন বিষয়ের পরীক্ষার জন্য আগের দিন শেষ মুহূর্তে বইয়ের পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে একমনে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ওই পরীক্ষার্থী। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় ওই বধূ পরীক্ষার্থীর। এই আবহে তড়িঘড়ি স্বামী সইদুল হক অসুস্থ গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে আম্বুল্যান্সে করে রায়গঞ্জ মেডিকেল হাসপাতালের যান। বৃহস্পতিবার রাতেই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন নাজিমা। সদ্য মা হওয়ার আনন্দে আত্মহারা প্রসূতি পরীক্ষার্থী।
কিন্তু রাত পেরোলেই উচ্চমাধ্যমিকের দর্শন পরীক্ষা। স্বাভাবিকভাবে, এই অসুস্থ শরীরে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে পরীক্ষায় বসা কার্যত অসম্ভব। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালেই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কাছে আবেদন জানান পরীক্ষার্থী বধূর স্বামী। প্রসূতি পরীক্ষার্থীর আবেদনে সাড়া দিয়ে এদিন রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক তলায় পর্যবেক্ষণ কক্ষেই নাজিমার জন্য বন্দোবস্ত করা হয় পরীক্ষার। সেই ঘরে বসেই এদিন পরীক্ষা দেন তিনি।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নাজিমা বলেন, “ভাবতে পারিনি এই অবস্থায় পরীক্ষা দিতে পারব। মনের জোরে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য স্বামী মারফৎ স্কুলে আবেদন করি যাতে হাসপাতালে বসেই পরীক্ষা দিতে পারি। উচ্চমাধ্যমিক সংসদ তাতে রাজি হয়েছেন। এবং টানা তিন ঘন্টা হাসপাতালের পর্যবেক্ষণকক্ষে বসে পরীক্ষা দিতে পেরেছি। পরীক্ষা ভালো হয়েছে।” চুড়ামন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “আমাদের স্কুলে যে পরীক্ষার্থীর সিট পড়েছে, সে প্রসব বেদনা নিয়ে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজে ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং একটি নবজাতক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। মেয়েটি যাতে পরীক্ষা দিতে পারে সেই কারণে স্কুল পরিদর্শক ও জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলা হয়। এরপর উত্তর দিনাজপুরের জেলা শিক্ষা দপ্তর ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সদস্যদের তৎপরতায় মেয়েটি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায়।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এক বছর আগে ইটাহার থানার পাড়া হরিপুর সংলগ্ন খরস্রোতা গ্রামের বাসিন্দা নাজিমা খাতুন এর সঙ্গে রায়গঞ্জ থানার গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্যামপুরের বাসিন্দা পেশায় নির্মাণ শ্রমিক শহিদুল হকের বিয়ে হয়। কাল অর্থাৎ শনিবার সংস্কৃত পরীক্ষা রয়েছে, চলতি মাসের ২৮ তারিখে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষা রয়েছে, ওই পরীক্ষার্থীর।