গাজোল: অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় মৃত্যু হয় বাবার। তারপর সংসারের হাল ধরেন বড় দিদি। টিউশন পড়িয়ে ছয়জন সদস্যের খাবার ব্যবস্থা এবং চার ভাই বোনের পড়াশোনার দায়-দায়িত্ব সামলান তিনি। বড়দিদির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরেন ছোট দিদি। তারও বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর বাধ্য হয়ে দুই ভাইকে ধরতে হয় সংসারের হাল। নিজেরা টিউশন পড়িয়ে যে টাকা উপার্জন করে তা দিয়েই চলে পড়াশোনা এবং সংসার। সেই পরিবারের ছেলে গাজোলের (Gazole) দীপ রায়। এবারের উচ্চমাধ্যমিকে (HS Result 2024) ৪৮০ নম্বর পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে।
গাজোলের শিউচাঁদ পরমেশ্বরী বিদ্যামন্দিরের (Gazole Sewchand Parameswari Vidyamandir) কলা বিভাগের ছাত্র দীপ। তার প্রাপ্ত নম্বর, বাংলায় ৮৮, ইংরেজিতে ৯৫, ভূগোলে ৯৬, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৯৪, দর্শন ৯৬ এবং এডুকেশন ৯৯। তার সাফল্যে খুশি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুনীলচন্দ্র মণ্ডল সহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তবে প্রধান শিক্ষকের আক্ষেপ, যদি আরেকটু বাড়তি সময় তাকে দেওয়া যেত, তাহলে আরও ভালো ফলাফল করতে পারত দীপ।
দীপ জানিয়েছে, তাদের পরিবারে সকলেই যথেষ্ট মেধাবী। বড় দিদি এসএসসি পাশ করে বসে আছেন। মেজদিদি ডিএলএড কোর্স করেছে এবং টেট পরীক্ষা দিয়েছে। ছোটদিদি সেট পাশ করেছে। এখন নেট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দাদা গাজোল কলেজে ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করছে। সেও ছোট থেকে পড়াশোনায় ভালো। বাবা রতন রায় কাঠের আসবাবপত্র তৈরি করতেন। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা মারা যায়। তারপর থেকে টিউশন পড়িয়ে বড়দিদি সংসার চালাতেন। বর্তমানে সে এবং তার দাদা টিউশন পড়িয়ে নিজেদের পড়াশোনার খরচ এবং সংসার চালাচ্ছে। পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা যথেষ্ট সাহায্য করেছেন বলে জানায় দীপ। চারজন গৃহশিক্ষকের কাছে সে পড়ত। তিনজন গৃহশিক্ষক তার কাছ থেকে কোনও পয়সা নিতেন না। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, গানশোনা তার পছন্দের। তবে দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠার পর থেকে মাঠে যাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল। গতকাল ফলাফল দেখার পর ভালো লাগলেও, আরেকটু ভালো ফলের আশা করেছিল সে। দীপের ইচ্ছে, কলকাতার কোনও কলেজে ভর্তি হয়ে ডব্লিউবিসিএস করার জন্য কোচিং নেওয়া। কিন্তু আর্থিক প্রতিবন্ধকতা বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দীপের মা জয়ন্তী রায় জানান, ছেলেমেয়েদের জন্য গর্বিত তিনি।